শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তুরস্ক। এর অংশ হিসেবে শনিবার ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া ও নাইজেরিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।
ফ্রন্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ’র সঙ্গে আলাপকালে এরদোয়ান বলেন, জেরুজালেমের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা বিশ্ব মানবতার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটা ভুল পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব পুরো অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়বে।
আলোচনায় দুই নেতা জেরুজালেম ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান। একইদিন তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এবং নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি’র সঙ্গে জেরুজালেম ইস্যুতে কথা বলেন।
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। আগামী ১৩ ডিসেম্বর এ ইস্যুতে তুরস্কে ওআইসি’র জরুরি সম্মেলনের কথাও উল্লেখ করেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, জেরুজালেম মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পবিত্র শহর; এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ-এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ।
এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল দখলদার রাষ্ট্র। তারা শিশু ও তরুণদের ওপর গুলিবর্ষণ করছে। গাজায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। দ্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, শক্তিশালী রাষ্ট্র হওয়া মানেই তার অবস্থান সঠিক; এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। বিশ্ব নেতাদের কাজ শান্তি বজায় রাখা, সংঘাত তৈরি করা নয়।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেন এরদোয়ান। এছাড়া লেবানন, কাজাখস্তান, আজারবাইজানের নেতাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
চলমান সংকটে তুরস্কের ভূমিকা প্রসঙ্গে এরদোয়ান বলেন, যদি তুরস্ক দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে ফিলিস্তিন, জেরুজালেম, সিরিয়া ও ইরাক নিজেদের আশাবাদ হারিয়ে ফেলবে।
এদিকে রবিবার ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার তৃতীয় দিন চলছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ বিক্ষোভে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন দুইজন। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০০ জন। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন দুই হামাস নেতা। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন।
ট্রাম্পের ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মুসলিম বিশ্বে। প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্নের প্রস্তাব দিয়েছে আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট। শুধু প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে জেরুজালেম ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কাতার। মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেছেন, এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে এরদোয়ানের সঙ্গে কথা হয়েছে তার।