বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪১

প্রকৃতির আপন মায়ায় দুই মৌসুমে হাকালুকি হাওরের ভিন্ন রুপ

প্রকৃতির আপন মায়ায় দুই মৌসুমে হাকালুকি হাওরের ভিন্ন রুপ

/ ২৩১
প্রকাশ কাল: সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৩

সৈয়দ মুন্তাছির রিমন : হাওর-বাওর, বিল-ঝিল, আর অজস্র নদী খালের দেশ এই বাংলাদেশ। ভৌগলিক অবস্থান বা এলাকার বৈশিষ্টের দিক থেকে বিবেচনা করে এ দেশের হাওরকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এই তিন শ্রেণীর হাওর এলাকা মৎস্য সম্পদ, পানি সম্পদ, কৃষি এবং আর্থ সামাজিক শতর্ গুলো ভিন্ন রুপে প্রতীয়মান। হাকালুকি হাওরের ভূ-তান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য উজানে রয়েছে উচু পাহাড় শ্রেণী এবং প্রতি বছরই আকস্মিক বন্যায় পাহাড় থেকে প্রবাহমান সংযুক্ত নদীগুলো দিয়ে বয়ে আনে প্রচুর পরিমাণে পলি মাটি। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায় মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে মাদার ফিসারী নামে খ্যাত হাকালুকি হাওর অবস্থিত। এ হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর তার মধ্যে শুধু মাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর এবং জল মহারের সংখ্যা সর্ব মোট ১৩১ টির মাঝে ২০ একরের উর্ধ্বে ৫০ টি ও নীচে ৮১ টি বিল বিদ্যমান রয়েছে। হাওরের বুকচিরে সুনাই, জুড়ী,দর্শনা, বালিছা, নদীসহ মোট ১৩টি নদী ও ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। পরিসংখ্যানে জানা যায়-এ হাওরে বড় ও উন্নত জাতের মাছের গর্ভাধার এবং প্রাকৃতিক ভাবে মাছের ডিম পাড়ার উপযুক্ত প্রায় ৫,০০ হেক্টর এলাকা রয়েছে এবং এ থেকে বছরে প্রায় ২,৫০০ টন মাছ উৎপাদন হত। তার বুকের বিলগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যেমন বারজালা বিলে প্রধানত রুই, পিংলার কোনা, মালাম এবং মুছনা বিলে আইড়, বোয়াল ও পুটি, চিনাউড়া বিলে বোয়াল, শিং, মাগুর ও টেংরা, কুকুরডুবি, চিতলা ও কাটুয়া বিলে-পাবদা, তুরাল, রাচি বিলে বাতাসি, লামবা বিলে-সরপুটি এবং নাদ বিলে-চিতল মাছের প্রাধান্য ছিল। এ হাওরেরর ছোট বড় প্রায় ২৩৮ টি বিল রয়েছে এবং বিলগুলোতে ১০৭ প্রজাতির মাছ বিদ্যমান আছে আর বাকিগুলোর বিলুপ্তি ঘটেছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান- কালের স্রোতে ধীরে ধীরে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা ও কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশন ব্যবহার করার ফলে হাওরের মাছের বংশ নিঃশেষ হচ্ছে। সামপ্রতিক কালে প্রভাবশালী কিছু শহরী মৎস্যজীবী ইজারাদাররা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ ধরার বারণে হাওরটি মৎস্য শুন্য হয়ে পড়ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর এ হাওরের হাজার হাজার মৎস্যজীবিরা কর্মহীন এবং এ অঞ্চলের জনগণের মাঝে আমিষের চাহিদার অভাব দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়-ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে মাছ ধরা শুরু হয়ে চলতে থাকে পরবর্তী জুন মাস পর্যন্ত। এর ফলে হাওরে আগের মত মাছ উৎপাদন হয়না। উজান থেকে গড়িয়ে আসা পলিমাটির কারণে হাকালুকি হাওরের মৎস্য সম্পদের সম্ভাবনাময় বিল সমূহ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওরের বড় বড় গাছ পালা, জোড় ঝাড় জ্বালানী কাঠের জন্য ব্যবহার করার ফলে মাছের অভয়াশ্রম কমে যাচ্ছে এবং বর্ষা মৌসুমে পাল তোলা নৌকার পরির্তে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা ব্যবহারের ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে জল মহাল গুলোর ব্যবস্থাপনার যে পদ্ধতি রয়েছে তাতে শুধু সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির উপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। জল মহাল গুলোর মাছের বংশ বৃদ্ধি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয় না। হাওরের বিভিন্ন বিল পরিদর্শন কালে প্রকৃত পেশাজীবী মৎস্য চাষীরা জানান- রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষমতাশালী শ্রেণীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিল ইজারা পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হই। আর এসব প্রভাবশালী ইজারাদারদের শাসন শোষণে আজও বন্দি তারা।

হাওর পাড়ের জনৈক মৎস্য চাষী রশির আলী (৫০) ইকানও ২০/৩০ বৎসর ধরে ধানচাষ হইতো। কিন্তু বাবার আমলে ইতা কিতা চাষ হইতো। আর ইকান তাকি লইয়া আমার প্রায় ১৫/২০ কিয়ার জমি উধা পড়ি রইছে। গত বছর আমার বিদেশি ভাইর লগে মাতিছলাম জমি গুলোতে পুকুর কুদিয়া মাছ চাষ করার লাগি। আর হে রাজিও হইছলো। কিন্তু এ ব্যাপারে উপজেলার মৎস্য অফিসে গিয়া কোন সাড়া পাইলাম না ।

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলাপকালে তিনি জানান-হাকালুকির উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন ও শীঘ্রই তার বাস্তবায়ন করা হবে ।

তবে এ বিরাট হাকালুকি মৎস্য রক্ষার জন্য অতি শীঘ্রই দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা দরকার। বর্তমানে এ হাওরের মৎস্য উৎপাদন পূর্বের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। শত শহ মৎস্যচাষীরা অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। এ জন্য হাকালুকির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে ইলিশ উৎপাদনের বাস্তব পরিকল্পনার মত হাকালুকিতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং খাল কনন কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও আগামী ২ বৎসর মাছ নিধনসহ ইজারা দেয়া বন্ধ করা প্রয়োজন। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শুভদৃষ্টি ও বাস্তব কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় মৎস্যজীবিসহ সচেতন মহল।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
All rights reserved © shirshobindu.com 2024