সুমন আহমেদ: সিলেট নগর ভবনের রাজত্বে দীর্ঘ সময় যার পদচারণা আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা আর সিলেট মেয়র বলতে যাকে বোঝায় সেই মেয়র কামরান আজ সিলেটের নগর পিতা নন। এটা যেমন কামরান বিশ্বাস করতে পারছেন না ঠিক তেমনি তার বক্তকূল নগরীবাসীসহ প্রবাসী অনেকে মেনে নিতে পারছেন না।
সিলেটের নগর ভবন নিয়ে আধিপত্য মানেই মেয়র কামরান যার বিপরীতে জয় ছিনিয়ে নেওয়া অবিশ্বাস্য ছিলো। কিন্তু এই পরিণতির দিকে যেতে কামরানের দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলই প্রধানত দায়ী। তবে তার মধ্যে একটি কারণ আওয়ামী লীগ সঙ্গে না থাকা এবং ছাত্রলীগ আলাদা থাকা। আর এক্ষেত্রে তার বিরোধিতা করেছেন তারই নির্বাচনী তৎপরতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন। সেই ব্যক্তির দুর্ভিসন্ধি ছিলো কামরানকে পরাজিত করা। অথচ ওই ব্যক্তির ওপরই ছিলো নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়-দায়িত্ব। সেদ্য সাবেক মেয়র কামরানে একান্তই কিছু ব্যাক্তিদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়। তারা বলেন, কামরানও ইতোমধ্যে তার পরাজয়ের সব কারণ চিহ্নিত করেছেন।
সিলেট লোকমুখে প্রচারিত এক সময়ের কামরানের প্রতিদ্বন্ধী ও সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে কামরানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কামরান কেন পরাজিত হলেন, উত্তরে তিনি বলেন, আমি কি বলব, এটা তাকেই জিজ্ঞেস করুন, তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নির্বাচনের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলয়ের নেতাকর্মীরা কামরানের পক্ষে মনে প্রাণে মাঠে নামেননি। এর বিপরীতে তারা গোপনে আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে তার ভোটে সহযোগিতা করেছেন। কেউ কেউ নিজস্ব ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্টার হাতে নিয়ে ঘুরছেন, আবার কোন সভা সামবেশে নয় মাত্র একজনের হাতে লিফলেট দিচ্ছেন- এমন ছবি দিয়ে প্রকাশ্যে বোঝাতে চেয়েছেন কামরানের পক্ষে খাটছেন। কিন্তু আন্তরিকভাবে তারা চাননি কামরান নগরপিতা হোক। আর এসব দায়িত্ব পালন না করায় কামরানের পক্ষে তার দল ততটা সংগঠিত হতে পারেনি। এমনকি লোক দেখানো লিফলেট বিতরণ ও ফটোসেশন-প্রচারণা চালিয়েছেন তার দলের এমপিসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। আর এ কারণেই বড় ব্যবধানে হেরে গেছেন পর পর দুই বারের মেয়র। এবং এর আগে দুইবার পৌর চেয়ারম্যান, তিনবার কমিশনার নির্বাচিত হওয়া তিন যুগের সিলেট নগর অধিপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, মেয়র থাকাকালে কামরান দলীয় নেতাকর্মীদের খুব একটা পাত্তা দেননি। উল্টো ছাত্রাবাস পোড়ানোর নায়ক নামধারী ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে তিনি দলকে বিতর্কিত করেছেন। এই ক্ষোভ থেকেই নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেন। পরাজয়ের জন্য কামরানও সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় দল তার পক্ষে খুব বেশি কাজ করেনি। অনেক ওয়ার্ডে এজেন্টরা কেন্দ্রে যাননি। এছাড়া নানা অপপ্রচারও প্রভাব ফেলেছে নির্বাচনে।
Leave a Reply