l
শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
স্থগিত হওয়া জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস) সুবিধা আবারও পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার রাজধানীর ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ কনভেনশন-২০১৩ শীর্ষক আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, “যেসব কারণে জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে, সেসব সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এ সুবিধা আবারও পাওয়া যাবে। ইউনূস বলেন, শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তাদের অসন্তুষ্টি ছিল। সেগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামের সাধারণ শ্রমিকরা পোশাক শিল্পের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় এটি এখন অনেক বড় শিল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের জন্য এই ট্রেড সুবিধা ফিরে পেতে আন্তর্জাতিক শ্রম মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রেসিডেন্ট সে অবস্থা ফিরে এসেছে দেখলে ফের এই সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে। বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্য এই সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাকে এই সুবিধা নেই। আর তৈরি পোশাকই হলো যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি আয়ের মাত্র শতকরা শূন্য দশমিক ৫৪ ভাগ আসে জিএসপি সুবিধা থেকে, যার পরিমাণ ২০১২ সালে ছিল ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মোট রফতানি আয় ছিল ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিএসপি সুবিধা স্থগিত হলে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে এসব পণ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সিনেটররা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করতে এবং সে দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান করাসহ শ্রম আইন সংশোধনের জন্য রোডম্যাপ তৈরি ও এর জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে আমরা ওবামা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। ২০০৭ সালে আমেরিকার শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এএফএল-সিআইওর অভিযোগের ভিত্তিতে ওবামা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে ছয় বছর আগে এএফএল-সিআইও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক সিনেট কমিটিতে অভিযোগ দায়ের করে। এ অভিযোগ ইস্যুতে ইতোপূর্বে একাধিকবার শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিক নিহত এবং সর্বশেষ রানা প্লাজা ধসের কারণে ১১৩০ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এএফএল-সিআইও আবার নতুন করে অভিযোগ দায়ের করে। গত ৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক সিনেট কমিটিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি হয়।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জিএসপি সুবিধায় রফতানি আয়ের পরিমাণ সামান্য হলেও ভয়ের বিষয় অন্য জায়গায়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে খারাপ ইঙ্গিত যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার নেই। তাহলে এর প্রভাব পড়বে সবখানে। গত এপ্রিলে সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসে ১১৩০ জন শ্রমিক নিহত হন। এরপরই বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা পাওয়া নিয়ে নতুন করে আলোচন শুরু হয়। ওই ঘটনার প্রায় দুই মাস পর নয় ডেমোক্র্যাট সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ যেসব বাণিজ্যসুবিধা পেয়ে থাকে, তা স্থগিত রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতি আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতরে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশের অগ্রগতি হওয়ার আগ পর্যন্ত এ সুবিধা স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটি প্রক্লেইমেশন ইস্যু করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেন। দেশটির ১৯৭৪ সালে গৃহীত আইনের ৫০২ (ডি) (২) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ বাণিজ্য ক্ষেত্রে জেনেরালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) পাওয়ার উপযোগী নয় বলে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে এই ঘোষণায়। ঘোষণায় বারাক ওবামা স্পষ্টই বলেন, বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা স্থগিত সম্পূর্ণ একটি সঠিক কাজ। কারণ, এই উন্নয়নশীল দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি এবং নিচ্ছেও না। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্রের হার্মোনাইজড টেরিফ শিডিউল (এইচটিএস) এর ৪(এ) এবং ৪(বি)(ক) মডিফাই করাকেও যথার্থ মনে করছি।