l
সোমবার, ০১ মার্চ ২০২১, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন
আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘ইমাম আবু দাউদ (রহঃ)-এর জীবন চরিত্র‘। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান। ‘ইসলাম থেকে’, বিভাগ প্রধান, শীর্ষবিন্দু নিউজ।
১ জন্ম ও বংশ পরিচয়:
নাম সোলায়মান,কুনিয়াত আবু দাউদ। পিতার নাম আশআস।তাঁর পুরা নাম আবু দাউদ সোলায়মান ইবনুল আশআস ইবনে ইসহাক আল আসাদী আস সিজিস্তানী, ইমাম আবু দাউদ ২০২ হিজরী মোতাবেক ৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে কান্দাহার ও চিশতে নিকটবর্তী সিজিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর উর্দ্বতন পুরুষ ইমরান আরব দেশের অধিবাসী এবং আসাদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইমরান তার সময়কালের সিফফীনের যুদ্বে অংশগ্রহন করেন এবং হযরত আলী (রাঃ)- এর পক্ষে যুদ্ব করে শহীদ হন।
২ শিক্ষাজীবন:
ইমাম আবু দাউদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। সম্ভবত নিজ গ্রামেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।দশ বছর বয়সে তিনি নিশাপুরের এক মাদরাসায় ভর্তি হন। এখানেই তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসলামের কাছে হাদীসশাস্ত্র অধ্যায়ন করেন।হাদীসে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য তিনি মিসর, সিরিয়া, হে জায, ইরাক, খোরাসান প্রভৃতি বিখ্যাত হাদীস গবেষণা কেন্দ্রসমূহ ভ্রমণ করেন এবং তদানীন্তন সূবিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। বসরা যাওয়ার পূর্বে তিনি খোরাসানে বিভিন্ন মুহাদ্দিসের নিকট হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন।
৩ তাঁর শিক্ষকবৃন্দ:
তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণ হলেন– ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ওসমান ইবনে আবু শায়বা, কুতাইবা ইবনে সাঈদ, ইয়াহইয়া ইবনে মূঈন প্রমুহ।
৪ কর্মজীবন:
ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) শিক্ষাজীবন শেষ করে ইলমে হাদীসের খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করেন।তিনি হাদীস চর্চা,গবেষণা ও শিক্ষাদানে সারা জীবন কাটিয়ে দেন।এ প্রেক্ষিতে তিনি হাদীসশাস্ত্রের অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন।তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- (১) সুনানে আবু দাউদ, (২)মারাসীলে আবু দাউদ, (৩) আন নাসিখ ওয়াল মানসূখ, (৪) ফাযায়েলুল আনসার, (৫) মারেফাতুল আওকাত, (৬) কিতাবু বদউল অহী, (৭) আর রদ্দু আলাল কাদরিয়্যা, (৮) মুসনাদে মালেক ইবনে আনাস, (৯) আল মাসায়েল, (১০) মা তাফাররাদা বিহী আহলুল আসমার ইত্যাদি।
৫ ছাত্রবৃন্দ:
গ্রন্থ রচনার সাথে সাথে তিনি শিক্ষাদানে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ইমাম আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিযী,ইমাম আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে শুয়াইব আন নাসায়ী, আবু আওয়ানা, আবু বিশর আদদুলাভী, আলী ইবনে হাসান ইবনুল আবদ, আবু উসামা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল মালেক, আবু সাঈদ ইবনে আরাবী, ইবনে ওয়াসা এবং স্বীয়পুত্র আবু বকর (রহঃ)
৬ চরিত্র:
তিনি ছিলেন আবেদ, যাহেদ,আল্লাহভীরু ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ। দুনিয়ার ভোগবিলাসের প্রতি তাঁর কোনো মোহ ছিলনা।এ প্রসঙ্গে কয়েকটি বর্ণনা প্রণিধানযোগ্য। যেমন-(ক) ইমাম দাসাহ উল্লেখ করেন, ইমাম আবু দাউদের জামার একটি হাতা প্রশস্ত ও একটি হাতা সংকীর্ণ ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,যে হাতাটি প্রশস্ত তার মধ্যে আমি লিখিত হাদীসগুলো রেখে দেই এবং সংকীর্ণ হাতার মধ্যে এ জাতীয় কিছু নেই (খ) মুসা ইবনে হারুন রহঃ) বলেন, ইমাম আবু দাউদ দুনিয়াতে হাদীসের খেদমত এবং আখেরাতের জান্নাত লাভের জন্য সৃষ্ঠি হয়েছেন। আমি তাঁর থেকে উত্তম কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি। (গ) ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে ইমাম আবু দাউদ তাঁর সমসাময়িক মুহাদ্দিসগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। (ঘ) ঐতিহাসিক ইবনে তাগরিদী বলেন, তিনি ছিলেন হাদীসের হাফেয,সমালোচক ও সূক্ষ্নাতিসূক্ষন ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত খোদাভীরু এক মহান ব্যক্তি।
৭ মাযহাব:
এ ব্যাপারে আলেমগণ কয়েকটি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যেমন- (ক) নওয়াব সিদ্দিক হাসানের মতে, ইমাম আবু দাউদ শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। (খ) আবু ইসহাক সিরাজী ও আল্লামা ইবনে তাইমিয়া এর মতে, তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কেননা তিনি তাঁর গ্রন্থে হাম্বলী মাযহাবের পক্ষে দলীল পেশ করা যায়, এমন সব হাদীসের প্রাধান্য দিয়েছেন। (গ) কেউ কেউ বলেছেন, তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তবে সঠিক কথা হলো, তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন মুজতাহিদ ছিলেন।
৮ ইন্তেকাল:
হাদীসশাস্ত্রের এ মহান ব্যাক্তি ২৭৫ হিজরী সালের ১৬ শাওয়াল, ৭৩ বছর বয়সে বসরা নগরে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইআলাইহি রাজিউন…
লেখক: ইমাম ও খতিব– মসজিদুল উম্মাহ লুটন, সেক্রেটারি– শরীয়া কাউন্সিল ব্যাডফোর্ড ও মিডল্যন্ড ইউকে। সত্যায়নকারী চেয়ারম্যান- নিকাহনামা সার্টিফিকেট ইউকে। প্রিন্সিপাল- আর রাহমান একাডেমি ইউকে, পরিচালক- আর-রাহমান এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে।