শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার মাসখানেকের মাথায় নতুন নিতাকাত আইন চালু করতে যাচ্ছে দেশটির রাজকীয় সরকার। চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।
এটি কার্যকর হলে সামগ্রিকভাবে সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের পথে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানে কর্মরত বাংলাদেশিরা। দেশটিতে বর্তমানে ২৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন।
নিতাকাত শব্দের অর্থ ‘সৌদিকরণ’। এ আইন অনুসারে যে সব সৌদি প্রতিষ্ঠানে বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়, সে সব প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে সৌদি নাগরিকদেরও কাজের সুযোগ থাকতে হবে।
রিয়াদ থেকে প্রকৌশলী সৈকত শাহ গতকাল মঙ্গলবার জানান, নতুন আইন কার্যকর হলে সৌদি আরবে ৬০ বছর বা ততোর্ধ্ব বয়সী প্রবাসীরা দ্বিগুণ পারিশ্রমিক পাবেন।
অর্থাৎ কোনো কর্মীর বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হলে তাকে ২ জন ধরে গণনা করা হবে। নতুন নিতাকাত আইনে এমন ধারা রয়েছে।
তবে আইনটি প্রয়োগ হলে সার্বিকভাবে প্রবাসীদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যাবে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশিরা।
খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি যদি বিনিয়োগকারী, শিক বা চিকিৎসক হয়ে থাকেন, তবে তার ক্ষেত্রে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক কার্যকর হবে না। অবশ্য ফার্মাসিস্টসহ চিকিৎসা বিভাগে কর্মরত টেকনিশিয়ানদের বেলায়ও দুজন ধরা হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদি আরবের শ্রমবাজারকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। ২০১০ সালে প্রথম নিতাকাত কর্মসূচি হাতে নেয় সৌদি সরকার।
ফলে দেশটির নাগরিকদের বেকারত্ব ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। বিপরীতে প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসে, বেড়ে যায় কষ্ট।
সম্প্রতি টেলিকম সেক্টর থেকে প্রবাসী কর্মীদের বিতাড়নে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দেশটি। এ খাত থেকে ইতোমধ্যেই বহু প্রবাসীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে টানা ৭ বছর বন্ধ থাকার পর দেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি এটি উন্মুক্ত হয়েছে।
জানা গেছে, নামমাত্র অভিবাসন ব্যয়ে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই কর্মী পাঠানো যাবে দেশটিতে। যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিতে কর্মীপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে।
এছাড়া ভিসা, মেডিক্যাল ফি, এয়ার টিকিটÑ সবই দেবে নিয়োগকারী কর্তৃপ। কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে কারিগরী বিশেষজ্ঞসহ সৌদির একটি প্রতিনিধিদল শিগগির বাংলাদেশে আসবে।
২০০৯ সালের আগে বিভিন্ন সরকারের সময়ে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিতভাবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা অভিবাসন ব্যয়ে চাহিদার চেয়ে বেশি কর্মী সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গেছেন।
এই ব্যয় তুলতে গিয়ে অনেক কর্মীই সেসব দেশে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যান। বিষয়টি সেসব দেশের সরকারের নজরে এলে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ রাখে।