গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’এর মাসিক ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ জুলাই সংখ্যা প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, চলমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিসমূহ উৎপাদন বৃদ্ধির গতি ক্রমহ্রাসমান করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ভার এড়িয়ে পুনরায় প্রবৃদ্ধি-সংকোচনীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যখন গত দুই আর্থিক বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির গতি নিম্নমুখী, বিনিয়োগে মন্দাবস্থা চলছে, শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি সংকুচিত, রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, সুদের হারের বিস্তার অধিক, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে প্রচুর ভর্তুকি, সরকারি ঋণের অব্যাহত বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ অব্যাহত হ্রাস, কখনই তথাকথিত ’ভারসাম্য মুদ্রানীতি’র নামে টানা পঞ্চমবারের মত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষিত হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সংস্কার কর্মসূচির শর্তাবলী অনুসরণ বেসরকারি খাতে ঋণের সরবরাহ, বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস করছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬.৭১ শতাংশ থেকে ২০১১-১২ তে কমে গিয়ে ৬.২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং ২০১২-১৩ সালে আরও কমে ৬.০৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ সর্তক করে দিয়ে বলেছে যে, উচ্চ সুদের হারের জন্য বেসরকারি ঋণের প্রবাহ কমে গিয়ে বিনিয়োগকে আরো ব্যাহত করতে পারে যা জাতীয় উৎপাদনকে কমিয়ে দেবে। শিল্পের উৎপাদন সূচকে বর্তমান নিম্নগামীতাকে চিহ্নিত করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলেছে, শিল্প উৎপাদনের সঙ্গে মুদ্রানীতি সরাসরি সর্ম্পকিত এবং শিল্প ঋণের প্রবৃদ্ধির হারের নিম্লগামীতা লক্ষ্য করা গেছে।
’উন্নয়ন অন্বেষণ’র মতে, ধারাবাহিকভাবে গৃহীত সংকোচনমূলক মুদ্রনীতি বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করছে এবং শিল্পের কাচাঁমাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। বিগত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ১৮.৫ শতাংশ, কিন্তু অর্জিত হয়েছে মাত্র ৮.৮৯ শতাংশ। বর্তমান মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করে ১৫.৫ শতাংশ ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার জন্য যুক্তি হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তখন থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সংস্কার কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
Leave a Reply