শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর চেষ্টা ন্যাটো করছে না। সামরিক এই জোট আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধও চায় না এই জোট।
পূর্ব ইউরোপে অতিরিক্ত ৪ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সংঘর্ষ প্রতিহত করার জন্য, সংঘর্ষ উসকে দেয়ার জন্য নয়। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন উত্তর আটলান্টিকের সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চলমান উত্তেজনা সত্ত্বেও রাশিয়াকে কোনো হুমকি হিসেবে দেখছে না ন্যাটো। স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী সময়ে পশ্চিমাবিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছে পৌঁছেছে। ক্রাইমিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
সিরিয়াতেও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সাংঘর্ষিক। সব মিলিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাবিশ্বের সম্পর্ক নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের আভাস দিচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
তবে ন্যাটোর প্রধান বলছেন, নতুন করে কোনো স্নায়ুযুদ্ধ দেখতে চায় না তার জোট। তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ইউরোপে রাশিয়ার আগ্রাসী সামরিক নকশা রয়েছে, এটা অবাস্তব। তা সত্ত্বেও পূর্ব ইউরোপে নতুন করে সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছে বহুজাতিক সামরিক জোট ন্যাটো।
আগামী বছরের শুরুর দিকেই পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়াতে মোতায়েন করা হবে এসব সৈন্য। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা ও জার্মানি এই সৈন্য দলের নেতৃত্বে থাকবে। তবে এই সেনা মোতায়েনের অর্থ রাশিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া নয়।
ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ জানান, পারস্পরিক সহায়তা ও গঠনমূলক সম্পর্কের প্রচেষ্টা’ থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাটো। তিনি বলেন, ন্যাটো এখনই রাশিয়ার দিক থেকে কোনো হুমকি দেখছেন না।
তবে ইউক্রেনে রাশিয়া যা করেছে তার জবাব দিয়েছে ন্যাটো। ইউরোপীয় দেশগুলোকে ভয় দেখানোর জন্য রাশিয়া পারমাণবিক শক্তি নিয়ে যে বাগাড়ম্বর করছে, তার জবাবও দেয়া হয়েছে। ন্যাটো জানিয়েছে, রাশিয়া তার পশ্চিম সীমান্তে ৩ লাখ ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করে রেখেছে বলে মনে করে জোটটি।
প্রসঙ্গত, এ সপ্তাহেই রাশিয়ার একটি রণতরী রিফুয়েলিংয়ের জন্য স্পেনের বন্দরে হাজির হলে তা রিফুয়েলিং করেনি স্পেন। এই রণতরী সিরিয়াতে বেসামরিক জনগণের ওপর বোমা বর্ষণে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ন্যাটোর উদ্বেগের পরই এই সিদ্ধান্ত নেয় স্পেন। পরে পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চল থেকে রিফুয়েলিং করে ওই রাশিয়ান রণতরী।
এদিকে বিবিসির প্রতিরক্ষা প্রতিবেদক জোনাথন মার্কাস পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলছেন, রাশিয়া নানা দিক থেকেই দুর্বল একটি দেশ। দেশটির নেতৃত্বস্থানীদের বেষ্টনীবিষয়ক ধারণা শক্তিশালী।
আর পশ্চিমারা এটাকে ভেঙে দিতে উৎসুক এমন একটি ধারণার কারণেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও বেশি প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছেন। এটা ন্যাটোর তিন বাল্টিক দেশ ও পোল্যান্ডকে শঙ্কিত করেছে।
এ কারণেই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার মতো দেশও কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার আচরণ নিয়ে শঙ্কিত। আর এর জন্যই ন্যাটো এর উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দৃশ্যমান ও অত্যন্ত প্রতীকি আকারে নতুন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।