নিউজ ডেস্ক: যাত্রী হয়রানি আর অব্যবস্থাপনার ন্যক্কারজনক নজির গড়ে বহু দিন ধরেই বন্ধ আছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এবার গ্রাহকদের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে অপেশাদারিত্বের কলঙ্ক কুড়ানো এই বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স। পুঁজিবাজার থেকে টাকা সরিয়ে ইউনাইটেডের সমাধির ওপর ওড়াতে চাইছে নতুন কোম্পানির ডানা।
আর এই নতুন এয়ারলাইন্সের নাম হচ্ছে ইউনাইটেডের সব নাটকের নাটের গুরু তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর নামে। তার নামের তিনটি অংশের আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘টিএসি’ এভিয়েশন নামে নতুন এই এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করছে শিগগিরই। যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হচ্ছেন তাসবিরুল আহমেদ নিজেই।
তারই তত্ত্বাবধানে উত্তরায় ৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ কোটি টাকায় উঠছে নতুন ভবন, খোলনলচে পাল্টানো হচ্ছে ইউনাইটেডের টিকিট কাউন্টারগুলোর। পরিশোধ হচ্ছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বকেয়া। মেরামত করা হচ্ছে পুরনো এয়ারক্র্যাফট।
বিনিয়োগকারী ও কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইউনাইটেড এয়ারের নামে বন্ড ছেড়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যে টাকা তোলা হয়েছে, তারই একটি বড় অংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর নতুন এয়ারলাইন্সে। ইউনাইটেডের বসিয়ে রাখা এয়ারক্র্যাফটগুলোও ওড়ানো হবে তার নতুন এয়ারলাইন্স বহরে। আগামী বছর দুই এর মধ্যে টিএসিকে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে আকাশে না ওড়া ইউনাইটেড এয়ারের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার কাজটি এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে। তাই ইউনাইটেডের বন্ড কিনে জিম্মি হয়ে পড়া গ্রাহকরা এখন পুঁজি খোয়ানোর শঙ্কায় ভুগছেন। নতুন করে বন্ডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ধারাবাহিকতাও তাই পড়তির দিকে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ারহোল্ডার টাইম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আমান উল্লাহ আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, আমার একজন আত্মীয় ইউনাইটেড এয়ারে চাকরি করেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, কোম্পানিটির এমডির প্রধান লক্ষ্য টিএসি গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে এক থেকে দেড়শ’ কোটি টাকা সংগ্রহ করছেন খোদ এমডি। আর বাকি টাকা ইউনাইটে এয়ার থেকে বিভিন্ন কৌশলে তুলে নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ড ছেড়ে ২২৪ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই টাকার মধ্যে বিদেশ থেকে এয়ারক্র্যাফট কিনতে ডাউন পেমেন্ট বাবদ ১৪ মিলিয়ন ডলার (১১২ কোটি টাকা) খরচ হবে।
এছাড়া উত্তরায় ৫ কাঠা জমির ওপর ভবন নির্মাণ করা হবে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। বেবিচকের বকেয়া পরিশোধ করা হবে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। আরো কিছু টাকায় উন্নত করা হবে ইউনাইটেড এয়ারের টিকিট কাউন্টারগুলো।
নাম না প্রকাশের শর্তে ইউনাইটেড এয়ারের সাবেক এক কর্মকর্তা (বর্তমানে অন্য এয়ারলাইন্সে কর্মরত) বাংলানিউজকে বলেন, আমি ইউনাইটেডে থাকার সময় বন্ধ উড়োজাহাজগুলো কিছু টাকার বিনিময়ে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন এমডি। তবে এখন শুনেছি তিনি বন্ডের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানিটির ব্যাংক ঋণ রয়েছে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ ১৭৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং স্বল্প মেয়াদি ঋণ ১১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই ঋণের পাশাপাশি বেবিচক পাবে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ১১টি এয়ারক্র্যাফট সংস্কার ও নতুন আরো সাতটি এয়ারক্র্যাফট কেনার খরচ, চলতি বছরের প্রথম থেকেই বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন ও অনান্য পাওনা এবং অফিস ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। অথচ বন্ডের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না
এর আগেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) এবং রাইট শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে ৪১৫ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। তারপরও দেউলিয়া দশা কাটছে না তাদের।
যদিও বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ সম্পর্কে ইউনাইটেড এয়ারের এমডি ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ইউনাইটেডের টাকায় ইউনাইটেডের উড়োজাহাজই উড়বে। তবে আমি ২০১৮ সালের মধ্যে টিএসি এভিয়েশন গঠন করবো। দেশের মধ্যে জেলা থেকে জেলায় ফ্লাইট চালু করবো। এ লক্ষ্যে আমার পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছি।