সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৫

নিজের ভূল ব্যাখ্যা করে বিচারককে নাফিসের চিঠি

নিজের ভূল ব্যাখ্যা করে বিচারককে নাফিসের চিঠি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দুনিয়া জুড়ে ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা যে একটি বিরাট ভুল ছিল তা স্বীকার করে শাস্তি থেকে রেহাই চেয়ে বিচারককে একটি চিঠি লিখেছেন মার্কিন কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি যুবক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস। যদিও নিজে কখনো ইসলামী জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করেননি বলে বলে দাবি করেছেন নাফিস। নিউ ইয়র্কের ফেডারেল কোর্টের বিচারক ক্যারল আমনকে গত গত ৩১ জুলাই নাফিসের পাঠানো ওই চিঠির একটি অনুলিপি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ।

গত বছর জানুয়ারিতে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব মিসৌরির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নাফিস। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে ওই কোর্স শেষ না করেই জুনের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে একটি টেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তিনি। এরপর অক্টোবরে নাফিসের গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিউ ইয়র্ক পুলিশ ও এফবিআই জানায়,  কথিত ‘স্টিং অপারেশনের’ মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর নাফিসকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। নাফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, এই বাংলাদেশি যুবক এক হাজার পাউন্ড বিস্ফোরক দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ভবন উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার ভ্যানে সত্যিকারের বিস্ফোরক না থাকায় সেটি আর ফাটেনি।

গত ১৫ নভেম্বর গ্র্যান্ড জুরি নাফিসের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন করে। এতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্যে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা এবং একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা করার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এর ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। নাফিস গত ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দোষ স্বীকার করে বলেন, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত তিনি তছনছ করে দিতে চেয়েছিলেন। আর এ লক্ষ্যেই তিনি বিস্ফোরক ভর্তি ভ্যানের সাহায্যে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। নাফিস সেদিন আদালতে বলেন, শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেই তিনি ওসামা বিন লাদেনের অনুসারী হন এবং সন্ত্রাসী হামলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, জিহাদের নামে মানুষ হত্যা করা উচিত নয়।

বিচারক তখন নাফিসকে বলেন, এই অপরাধে তার ৩০ বছরের জেল এবং আড়াই লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই কোটি টাকা) জরিমানা হতে পারে। জেল খাটার সময় প্যারোলে মুক্তিরও সম্ভাবনা নেই। এমনকি একবার দোষ স্বীকার করলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও কোন সুযোগ তিনি পাবেন না। সব শুনেও নাফিস স্বাভাবিক কণ্ঠে বলেন, তিনি বুঝেই দোষ স্বীকার করছেন। এরপর নাফিসের মামলার রায়ের জন্য ৯ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেন বিচারক। এফবিআই নাফিসকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

নাটকীয় ওই চিঠিতে নাফিস লিখেছেন প্রেমিকার প্রতারণায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর কোনো জায়গা নেই। বেঁচে থাকারও আর কোনো অর্থ নেই। এই পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করতে পারতেন, কিন্তু ইসলামে নিষিদ্ধ বলে করেননি বলে চিঠিতে জানিয়েছেন এই বাংলাদেশি যুবক। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টার অভিযোগে রায় ঘোষণার ঠিক আগে ওই চিঠিতে নাফিস দাবি করেছেন, ছোটবেলার তোতলামির সমস্যা, লেখাপড়ায় ভাল করতে না পারা, ভাগ্যান্বেষণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও সফল হতে না পারা এবং মনের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের হতাশাই তাকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিল। কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে বিচারকের অনুকম্পা চেয়েছেন তিনি।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024