বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪

হেফাজতের সঙ্গে জোট বাধতে আগ্রহী এরশাদ

হেফাজতের সঙ্গে জোট বাধতে আগ্রহী এরশাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্বদেশ জুড়ে: সম্প্রতি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন স্বৈরশাসক বলে খ্যাত সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ। এতদিন বলেছিলেন একাই নির্বাচন করবেন। তবে এবার সুর পাল্টাছেন প্রতিনিয়ত। সহসাই বলছেন জোট হতে পারে আওয়ামীলীগ বিএনপি ছাড়া আদর্শের সাথে মিল রয়েছে কেবল এমন দলের সাথে।

হেফাজতে ইসলামকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। চলতি বছরের গোড়াতে গণজাগরণ মঞ্চ যাত্রা শুরুর পর আলোচনায় আসা এ দলটি ছাড়াও মহাজোট ও ১৮ দলীয় জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে নতুন জোট গড়ার পরিকল্পনা এঁটেছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেসকদের ধারনা, আগামী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন এরশাদ। চট্রগামের হাটহাজারীর জাতীয় পার্টির এমপি আনিসুল হক এর মধ্যস্থতা করছেন। কারণ আনিসুল হক হলেন হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এবং দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত ব্যাক্তি হাটহাজারীর প্রিন্সিপাল আল্লামা শফির খুবই কাছের মানুষ এমপি আনিসুল হক। যার সাথে রয়েছে শফির রয়েছে খুবই আন্তরিকতার সম্পর্ক। তাই এক্ষেত্রে আনিসুল হককে কাজে লাগিয়েছেন এরশাদ।

এরশাদ মনে করছেন, ঈদের পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও প্রবল। আর এমনটি হলে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে বলেই বিশ্বাস এরশাদের। তাই এ সুযোগটিকেই কাজে লাগাতে উঠে-পড়ে লেগেছেন তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে তো তিনি বলেই বসলেন, অনেকে জাতীয় পার্টিতে আসার জন্য অপেক্ষায় আছে। সময় হলেই চলে আসবে। মহাজোট বা ১৮ দলীয় জোটভুক্ত হয়ে জাপা নির্বাচন করবে না। দলীয় সূত্রমতে, মহাজোট ও ১৮ দলীয় জোটের বাইরে থাকা অন্য ইসলামী দলগুলোকেও জাপা-হেফাজত জোটে দেখা যেতে পারে। এমনকি ১৮ দলীয় জোটে থাকা দু’একটি ইসলামী দলও বেরিয়ে আসতে পারে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি মনে করছেন, হেফাজতে ইসলামের সারা দেশে বিশাল জনসমর্থন রয়েছে। হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্ররা এলাকাবাসীর কাছে সুপরিচিত। নানা কারণে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগায়োগ। তারা যদি ভোটের প্রচারে নেমে পড়েন, তাহলে পরিস্থিতি বদলে যাবে।

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জাপার রয়েছে আদর্শিক মিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে কোনো ভাবেই সহ্য করবে না হেফাজত। আবার জামায়াতের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকায় হেফাজতে ইসলাম বিএনপিকে সমর্থন করবে না। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীকে হেফাজতে ইসলাম সমর্থন করে না। হেফাজত নেতারা মনে করেন, জামায়াতের সঙ্গে ওঠা-বসা ও সংশ্রব রাখা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয়।

এসব সমীকরণের কারণে হেফাজতে ইসলামের সমর্থন জাপার দিকেই থাকবে বলেই মনে করছেন এরশাদ। আর তাই সাবেক এই রাষ্ট্রপতি হেফাজতে ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বলে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি প্রতিটি সভা-সমাবেশে, এমনকি দলীয় ফোরামের বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে দেওয়া এরশাদের বক্তব্যের খানিকটা অংশ জুড়েই থাকছে হেফাজতে ইসলাম। এমনকি আলেমদের ওপর হামলার  কারণে সরকারের ওপর গজব পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন এরশাদ।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তবে আমরা ইসলাম রক্ষার জন্য তাদের পাশে ছিলাম। ইসলাম ধর্মপ্রেমী লোকজন হেফাজতের সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, জোট গঠনের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পাশে হেফাজত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নোমান জানান, হেফাজত ও জামায়াতের সঙ্গে আকিদা মেলে না। ব্লগাররা রসুলকে কটূক্তি করলে তারা বাধ্য হয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে তাদের সঙ্গে ঐকমত্য হবে না। নোমান জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট নামে ২৩ দলীয় জোট রয়েছে। এ জোটের চেয়ারম্যান আকম শহিদুল্লাহ পাটোয়ারির সঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আলাপ আলোচনা হয়েছে। ঈদের পরে আলাদা জোট হতে পারে। এই জোটে হেফাজতে ইসলামও থাকবে বলেও দাবি করেন বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সময় যতো গড়াবে, অনেক কিছুই ঘটতে পারে।

যদি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত বিএনপির সাথেই এরশাদ জোট বাধবেন। আর এটা খুবই গোপন বিষয় যে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সিঙ্গাপুরে তার গোপন বৈঠকে এটা পাকাপোক্ত হয়ে গেছে যদি জোটবদ্ধ ভাবে বিএনপি ক্ষমতায় যায় তবে এরশাদ হবেন রাষ্ট্রপতি। যা আওয়ামীলীগ সরকার গতবার কথা দিয়ে এরশাদকে এই পদ দেয়নি। বেগম জিয়ার প্রতিশ্রতির ভিত্তিতে এবং আওয়ামীলীগের প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করতেই এরশাদ এর বিকল্প কিছু দেখছেন না। প্রসঙ্গত: সাবেক রাস্ট্রপতি এরশাদ সবসময় নিজেকে রাস্ট্রপতি হিসেবে মনে করেন। কারো সাথে পরিচয়ের সময় নিজেকে পরিচয় দেন প্রেসিডেন্ট এরশাদ। সাবেক কথাটা উল্লেখ না করায় এই পদের প্রতি তার অসম্ভব দুর্বলতা রয়েছে বলে তার ঘনিষ্টরা বলেছেন।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024