শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১

নরকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে রাখাইন রাজ্যে

নরকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে রাখাইন রাজ্যে

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় সংখ্যালঘু মুসলিম রাখাইন রাজ্যের অবস্থাকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম।

লন্ডন থেকে টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, সেখানে গত প্রায় দেড় মাস ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ৩৫০ জন নিহত হয়েছে।

নূরুল ইসলামের ভাষ্যে, বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে নারকীয় এক পরিস্থিতির। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ওই রাখাইন নেতা আরও বলেন, সেখানে এমন অত্যাচার চলছে, যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সেখানকার লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, সে চিত্রটা আরও অনেক বেশি ভয়াবহ।

তিনি জানান, গত ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইনদের হিসাবে কমপক্ষে সাড়ে তিনশ’ মানুষ নিহত হয়েছেন। নুরুল ইসলাম আরও জানান, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তর আরাকান এবং মংডু টাউনশিপে।

তবে নুরুল ইসলামের এই দাবি নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কারণ হিসিবে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, দেশটির সরকার কোনো সাংবাদিককেই মিয়ানমারের সহিংসতা কবলিত রাখাইন রাজ্যে যেতে দিচ্ছে না।

তবে সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অভিযানে রাখাইন রাজ্যে ৬৯ জন ‘বাঙালী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নূরুল ইসলাম সেনাবাহিনীকে মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব তথ্য কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। কারণ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক কিংবা সাংবাদিকদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বিভিন্ন পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। লোকজনকে গুলি করে মেরে ফেলছে। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে লোকজন যখন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তখন হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে গুলিবর্ষণ করে তাদের হত্যা করা হচ্ছে।

নূরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা যেখানে গিয়ে লুকাচ্ছে, সেখানে রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পথেঘাটে, খালে নদীতে তাদের মেশিনগান দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, লোকজন নৌকায় করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চাইলে তাদের নৌকার ওপর গুলি করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নূরুল ইসলাম বলেন, যাদের নিরাপত্তা নেই, তাদেরকে বাংলাদেশের আশ্রয় দেয়া উচিত।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। বাংলাদেশের উচিত তাদের জন্যে সীমান্ত খুলে দেয়া। না হলে এই লোকগুলো যাবে কোথায়?

ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, মনে করুন, আপনার ঘরে যদি আগুন জ্বলে তখন প্রতিবেশীর বাড়িতে আপনার আশ্রয় নিতে হবে। এজন্যে আপনাকে তো কোনো অনুমতি নিতে হবে না।

মিয়ানমার সরকারের কাছে তিনি আবেদন জানান, বেসামরিক লোকজনের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর এই অভিযান এখনই বন্ধ করতে, সাংবাদিকদের আক্রান্ত এলাকায় যাওয়ার অনুমতি দিতে এবং মানবাধিকার লংঘনের সব ঘটনা বন্ধ করতে। বাংলাদেশে অনেকের আশংকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপের সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে নূরুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোনো ভয়ের কারণ নেই। বাংলাদেশ সরকারের এই লোকগুলোকে আশ্রয় দেয়া উচিত শুধুমাত্র মানবিক কারণেই।

রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী বলে মিয়ানমার সরকার অপ্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। বলেন, তাদের অস্তিত্ব নিয়েই এখন টানাটানির সৃষ্টি হয়েছে। কোনো সহিংসতাকেই আমরা সমর্থন করি না।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024