শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: পটকা মাছ খেয়ে আজ সিলেটের জৈন্তাপুরে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়েছেন আরো ৬ জন। এই পটকা মাছ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী: পটকা মাছ (Puffer Fish) Tetradontiformes বর্গের Tetradontidae গোত্রের বেলুনাকৃতি মাছ। এটি নিজেকে বেলুনের মতো ফুলাতে পারে। স্বাদুপানি ও লোনাপানির উভয় পরিবেশে বাস করে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলিতে কোথাও কোথাও বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করে পটকা খাওয়া হলেও মাছটি আসলে বিষাক্ত এবং এতে অনেক সময় মৃত্যুও ঘটে থাকে। বাংলাদেশে ৩টি প্রজাতির পটকা মাছ আছে।
সবুজ পটকার (Chelonodon fluviatilis) শরীর কিছুটা চাপা, প্রায় ১২ সেমি লম্বা, মাথা ও পিঠ চওড়া, লেজের দিক হঠাৎ সরু। এদের পিঠের দিক জলপাই সবুজ, পাশ ও পেট সাদা, পিঠ ও পাশে কালো কালো দাগ থাকে। এরা নদী ও মোহনার বাসিন্দা। গঙ্গার পটকা (C. patoca) প্রায় বেলুনাকার, ৮ সেমি লম্বা, মাথা চওড়া, শরীর বাদামি বা কালো, পাশ ও পেট রুপালি, উপরে ডিম্বাকার ও গোলাকার দাগ থাকে।
প্রাপ্তিস্থান মোহনা ও বঙ্গোপসাগর। দাগফুটকি পটকার (Tetradon cutcutia) মাথা ও পিঠ চওড়া, লেজের দিক হঠাৎ সরু, পিঠ সবুজ-হলুদ, পেট সাদা। সারাদেশে স্বাদুপানিতে সর্বত্রই আছে। পটকা মাছ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বহীন।
এছাড়াও জানা যায়, পটকা মাছ বা Puffer Fish যা জাপানে ফুগো মাছ বলে পরিচিত আসলে একটি বিষাক্ত জলজ প্রাণী বা মাছ। এ মাছে রয়েছে ক্ষতিকারক টিটিএক্স (TTX) বা টেট্রোডোটোক্সিন (Tetrodotoxin) বিষ।
বাংলাদেশের নদী ও উপকূলে সব চেয়ে বেশি যে পটকা মাছের প্রজাতিটি পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম Tetraodon Cutcutia, ইংরেজিতে এ প্রজাতিকে Ocellated Pufferfish বলে।
এর দেহ প্রায় গোলাকার, মাথা চওড়া, দেহ খণ্ডও চওড়া তবে লেজের ঠিক পূর্বে হঠাৎ সরু হয়ে গেছে। মাছের দৈর্ঘ সচরাচর ৫-৯ সে.মি. হয়ে থাকে তবে কিছু কিছু বিল ও নদীতে সর্বোচ্চ ১৫-১৬ সে.মি. দৈর্ঘ্যেরও পটকা মাছ পাওয়া গেছে। উপরিতল থেকে সামান্য নিচে মুখ, উভয় মাড়ীতে দুটি ছেদন দন্ত রয়েছে। এই ৪টি দাঁতের কারণেই এর বৈজ্ঞানিক নামে টেট্রাডন শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরে প্রায় ২০-২৫টি প্রজাতির পটকা মাছ পাওয়া যায় তবে টেট্রাওডোন কুটকুটিয়া প্রজাতির পটকা মাছ বেশি পাওয়া যায়। এ মাছটিকে স্থানীয়ভাবে টেপা বা ফোটকা মাছও বলা হয়। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন তার বিষাক্ততা কোন অংশে কমে যায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণত প্রজনন ঋতুতে বা বর্ষাকালে এ মাছটি অধিক মাত্রায় বিষাক্ত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য সময়েও মাছটি কমবেশি বিষাক্ত থাকে ।
লক্ষ্যণ বা উপসর্গ:
পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হয় না । কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে আবার কারও কম থাকতে পারে । সে হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে এর বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে। পটকা মাছ খাওয়ার পর পর নীচের উপসর্গ গুলো দেখে বোঝা যাবে যে একজন মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা:
১. পটকা মাছ খেয়ে কিছুক্ষণ পর বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে
২. মাথা ঘোরানো, মাথা ব্যথা ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাবে
৩. তলপেটে ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে
৪. শরীর অসাড় হয়ে পড়া, হাত ও পায়ের পেশী দুর্বল হয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে
৫. হাটা চলার অক্ষমতা ও স্বাভাবিক চিন্তা প্রকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে
৬. কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে, আক্রান্ত রোগী অস্রাব্য ভাষায় গালাগল করতে থাকতে পারে
উপরের প্রতিটি, কয়েকটি অথবা সবগুলো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ বা প্রতিকার:
সাধারণত এ মাছ খাওয়া বর্জন করাই সবার জন্য মঙ্গলজনক তবে যদি কোন কারনে কেউ মাছটি খেয়ে ফেলে এবং তার বিষক্রিয়া শুরু হয় তাহলে কি করবেন? নিম্নোক্ত উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন:
১. যেকোন উপায়ে চেস্টা করতে হবে বমি করানোর জন্য । এক্ষেত্রে গ্রামের অনেক মানুষ গোবর গুলিয়ে সে পানি রোগীকে খাইয়ে থাকেন যাতে বমি আসে আর ভক্ষন করা মাছ বা বিষ বেরিয়ে আসে।
২. কাঠ কয়লা গুড়ো করে সরাসরি অথবা পানির সাথে গুলে খাওয়াতে হবে। কাঠ কয়লা গুড়ো আর্ন্তজাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিষক্রিয়া নিরাময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হিসেবে স্বীকৃত।
৩. প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়াতে হবে যাতে বিষক্রিয়ার ফলাফল কমে আসে।
৪. চেস্টা করতে হবে সজ্ঞান রাখার কারন জ্ঞান হারালে মস্তিষ্ক তার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
৫. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের ইমার্জেন্সীতে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারকে বলতে হবে লাইফ সাপোর্টে রাখতে।
এখন পর্যন্ত এ নিউরো টক্সিন এর কোন ভাকসিন আবিস্কার হয়নি তাই আমাদের সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। পটকা মাছ খাওয়া বাদ দিতে হবে। সরকারী বা বেসরকারীভাবে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার বিশেষ কোন উপায় নেই।
পটকা মাছ খাওয়া থেকে সবাই বিরত থাকুন ভাল থাকুন ও নিরাপদ থাকুন।