মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২২

বাংলাদেশকে ভালোবেসে মরতে চান বৃটিশ নাগরিক লুসি হল্ট

বাংলাদেশকে ভালোবেসে মরতে চান বৃটিশ নাগরিক লুসি হল্ট

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: এদেশে তার রক্তের কেউ নেই। তবুও এখানকার মাটি ও মানুষের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাদা চামরার ভিনদেশী কাটিয়ে দিলেন প্রায় ৬০ বছর। মহান মুক্তিযুদ্ধের নিভৃতচারী নিরব সাক্ষি এ মানুষটি যুদ্ধাহত মানুষের সেবা দিয়েছেন অকাতরে। তাইতো এখানকার মায়ায় বরিশালের মাটিতেই মরতে চান লুসি।

সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইংল্যন্ডের সেন্ট হেলেন শহরে লুসির জন্ম ১৯৩০ সালে। বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন হাসপাতালে মাত্র ৩০ বছরে বয়সে সেবায়েত হিসাবে যোগদান করেন। দুবছর পর দেশে ফেরার কথা থাকলেও এখানকার প্রকৃতি, মানুষ ও মাটির ভালোবাসায় মুগ্ধ করে তাকে।

৫৬ বছর ধরে চলছে লাল সবুজের দেশের সাথে মিতালি। গভীর ভালোবাসা থেকে রপ্ত করেছেন পুরোপুরি বাঙালিয়ানা। হৃদয় জুরে এখন বাংলাদেশের প্রেম। মনে প্রানে চাচ্ছেন বাংলাদেশ ভালো করুক, উন্নতি লাভ করুক।

আলাপে বেশ সুদ্ধ বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করেন লুসি। তিনি বলেন, বিনে পয়সায় কখনো সেলাই শেখানো, তাত প্রশিক্ষণ, পথ শিশুদের পাঠদান, কখোনো বা হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। কাজের শুরুটা হয়েছে বরিশাল থেকে। পরবর্তিতে রাজশাহী, ঢাকা, নওগা, যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ হয়ে আবারো ভালোবাস শহরে বরিশালে ফিরে আসা।

অক্সফোর্ড মিশন হোস্টেলের একটি ছোট কামরায় বাস করেন এই বৃটিশ নাগরিক। এখানে তার কাছে কেউ কেউ আসেন ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের জন্য। আবার কেউ বাংলা থেকে ইংরেজি করার জন্য। হাসিমুখেই তিনি এসব কাজ করে দেন। খুশি হয়ে যা দেন তাই গ্রহণ করেন। কোন নির্দিষ্ট চাহিদা নেই তার।

অক্সফোর্ড মিশনের ম্যানেজার বেনডিক্ট বিমল ব্যাপারি জানান, বৃটিশ নাগরিক হিসেবে মাসে ৭০ পাউন্ড ভাতা পান। যার প্রায় সবটাই অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেন লুসি। দীর্ঘ বছর ধরে লুসিকে সাদাসিদে জিবন জাপন করতে দেখে আসছেন তিনি। এদেশে তার রক্তের কোন আত্মিয় না থাকলেও আত্মিয়তা করেছেন অনেক বাঙালির সাথে। এখন তারাই তার সব।

আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্বৃতি লুসির রয়েছে। যুদ্ধকালিন সময়ে যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে বেশ কয়েক মাস আয়া হয়ে সেবা দিয়েছেন আহতদের। কোন স্বীকৃতি বা লাভের আশায় নয়, সম্পুর্ন মানবিক দিক থেকেই তিনি বেসামরিকদের সেবা দিয়েছেন।

বৃটিশ শাসকদের শাসন নিয়েও তার মনে ক্ষোভ রয়েছে। তার মতে বৃটিশরা এখানে (এই উপমহাদেশে) যা করেছেন তা ঠিক করেননি। পুর্বপুরুষদের দু:শাসন নিয়ে কেই কিছু বল্লে বোবা মুখে নিজেকে কষ্ট দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন।

মিশনের ভিতরে কবরস্থানে তার নিজের কবরের জায়গা ঠিক করে রেখেছেন। ৮০ বছরেরও বেশি বয়সের লুসিকে শান্ত, দরদী ও পরোপকারী হিসাবেই মিশনের সবাই জানেন।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024