শীর্ষবিন্দু সিলেট: সিলেটে নাগরিক সমাবেশ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলাম কখনই বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। তারা বারবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আঘাত এবং পেছনে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেছে। আমাদের এ অপত পরতা রুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র এবং সার্বিক মানবিক স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে’। গতকাল শুক্রবার সিলেটে বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিহত করা ও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও মুক্তচিন্তার পথ খোলা রাখা এবং তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা প্রতিহত করা ও নারীর অধিকার সমন্নুত রাখা এই ৫দফা দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও সিলেটের আহবায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী ও অর্থনীতিবিদ এম. এম. আকাশ।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করার মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি আহমেদ নূর। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. আকতারুল ইসলাম ও মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। জামায়াতে ইসলামকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত যে কয়টি মামলার রায় দিয়েছেন তার সবকটিতে বলা হয়েছে জামায়াতে ইসলাম একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে যেহেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন আছে সে আইনের আওতায় জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। এই হামলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো প্রাণহানি হয়নি কিন্তু মানুষের মনের ভেতরে ক্ষয় হয়েছে, অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির-বিহার সংস্কার করলেও মানুষের ভেতরে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা কিভাবে সারানো সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের মনে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যদি সরকার বদল হয় তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। সাজা হল কি হল না সেটা বিষয় নয়। একটি স্বীকৃত আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সেটা মুছে ফেলা যাবে না। ইতিহাসে তারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবেই থাকবে, এটাই হচ্ছে বড় প্রাপ্তি।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘জামায়াতে ইসলাম যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল এটা প্রমাণ করার জন্য যুদ্ধের সময় প্রকাশিত তাদের পত্রপত্রিকা ও পুস্তিকাই যথেষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘আল বদরের গেজেটে ষ্পষ্ট করে লেখা আছে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় পাকিস্তানী আর্মি যেসব অভিযান চালাবে আল বদর বাহিনী তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।’
ইসলাম হেফাজতের দোহাই দিয়ে হেফাজতে ইসলাম দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যে দেশে হিন্দুর ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ সেখানে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা হাতে গুনে নেওয়া যাবে। সেদেশে ইসলাম ধর্ম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কিভাবে।’ জামায়াতকে নিষিদ্ধকরণ বিষয়টি কোন রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না উল্লেখ করে ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন হলেও যাতে বিচার কাজ বন্ধ না হয় সে দায়িত্ব সমাজকে নিতে হবে।’
অধ্যাপক এম.এম. আকাশ বলেন, ‘জামায়াতের ইসলামের কাছে ইসলাম বড় বিষয় নয় তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায়। বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের প্রতিহত করতে হবে এখনই’। সমাবেশে জানানো হয় খুব শিগগিরই জাতীয় সম্মেলন করে সংগঠনের পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।
Leave a Reply