সিলেট সিটি পয়েন্টে রোববার বিকেলের আয়োজিত জাতীয় ঐক্যর ডাক’ সমাবেশে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা সভাপতি প্রফেসর ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী একমত পোষণ করেন বলেন, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র ছিনতাই হয়ে গেছে। দিন বদলের প্রতিশ্র“তি দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা মিথ্যার সাগর নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য।এখন সময় এসেছে তাদেরকে ক্ষমতার মসনদ থেকে হটিয়ে রাষ্ট্রকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলার জনগণই যেখানে এদেশের মালিক সেখানে তারা মরছে, লুটপাট হচ্ছে, দেশ রসাতলে চলে যাচ্ছে কিন্তু জনগণ কিছুই বলতে পারছে না।
সিটি পয়েন্টে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথির হিসাবে বক্তব্যে দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা গনফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক মোস্তাফ মহসিন মন্টু, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এডভোকেট শাহ আহমদ বাদল, গনফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী কামাল আহমদ, শান্তিপদ ঘোষসহ সিলেটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। সিলেটে পৌছে দুই নেতা প্রথমে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে তারা সিলেট থেকে দুর্বার গতিতে জাতীয় ঐক্যর ডাকের যাত্রা শুরু হলো জানিয়ে বলেন ‘ আউলিয়ার দেশ সিলেট থেকে যাত্রা শুরু করলে সফলতা ছাড়া এই যাত্রা বিফলে যায় না।আর বাংলার জনগনের জন্য আমাদের এই জাতীয় ঐক্যের ডাকেরও সফল হবে।
জনাব বি চৌধুরী তার বক্তব্যের এক পযায়ে প্রশ্ন করে বলেন, দেশ আজ কোথায় আছে? তা জানতে হলে জিজ্ঞেস করুন- নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াসের শিশু কন্যাকে ও তার পরিবারকে কিংবা বিশ্বজিতের মাকে জিজ্ঞেস করুন। তাদের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে দেশ কোথায় চলে গেছে। তাই দেশ উদ্ধারে আপনারা বাংলাদেশের জনগণ সবাইকে সংগঠিত হতে হবে। সাগর-রুনী হত্যাকান্ডে সরকারের দায়িত্বশীল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বললেন- ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিচার হবে, তবে আজ পর্যন্ত উনার ২৪ ঘন্টা পার হয় নাই। বিশ্বজিৎকে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের ছেলেরা হত্যা করলো, বতমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর বললেন- এ ঘটনায় ১১জন গ্রেফতার হয়েছে, অথচ তাৎক্ষনিক এক প্রশ্নের জবাবে মিডিয়ার কাছে পুলিশ কর্মকর্তা বললেন মাত্র তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে দিনকে রাত বানানোর মতো বিরোধীদলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনসভায় জনগণের ভোট চেয়ে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, জনগণের রায় মাথা পেতে নেবেন, তবে কেন জনতার দাবি উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে চান। তিনি কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, আপনার দলের অধীনে কখনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। তিনি বতমান সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার একদিকে চুরি করে অন্য দিকে সৎ-এর দোহাই দিয়ে পুনরায় জনগণকে ভোট দেওয়ার কথা বলে। দেশের সব টাকা লুটপাট হয়ে গেছে।শেয়ার কেলেংকারী আমরা দেখেছি। টাকা হারিয়ে মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। আর দেশের এমপি মন্ত্রীরা ৪শত কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ব্যংক খুলছে। এসব টাকার উৎস কোথায় জানতে চেয়ে তিনি টাকার উৎস খুজে দেখতে সিলেটবাসীকে তাদের উপর দায়িত্ব দেওয়ার আহবান জানান।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা দিনবদলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তারা মিথ্যুক উলেখ করে তিনি বলেন, এ সরকারের অধিনে কোন নির্বাচন নয়। প্রয়োজনে আবার লড়তে হবে। টেলিভিশনের সামনে নিরিহ বিশ্বজিৎকে হত্যা করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ডাহা মিথ্যাচার দেশের ইমেজ সংকট করেছে। এত বড় মিথ্যুক সরকার আর আসেনাই। দেশের কল্যাণে বতমান সরকার নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন দিয়ে দেশবাসীকে মুক্তি দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। হলমার্ক কেলেঙ্কারীর কথা উলেখ করে দেশের প্রথম এ সংবিধান প্রণেতা বলেন, ‘আসামীদের কাছ থেকে মাত্র ৩শত কোটি টাকা পাওয়া গেল। বাকি কোটি কোটি টাকা কোথায় গেল জাতি জানতে চায়। দায়িত্ব পেলে টাকা দেশে থাক বা বিদেশে থাকা ৪হাজার কোটি টাকা বের করে আনবো জনগণ সংগঠিত হলে কীভাবে জাতীয় সম্পদ রা করা যায়-তা সিলেটবাসী একবার দেখিয়ে দিয়েছেন। হরিপুরের সম্পদ বিদেশীদের কাছে তুলে দিতে পারেনি সাবেক স্বৈরাচার সরকার। গণতদন্ত কমিশনের মাধ্যমে তা ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো। এ সরকারের আমলে টেংরাটিলার ৭শ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলার গোপন সমঝোতার চেষ্টা চলছে। সবাইকে দেশের সম্পদ, মানুষ ও গণতন্ত্রের রায়ে জেগে উঠার ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন গণতদন্ত কমিশন গঠন।
Leave a Reply