সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে দৃষ্টিপাত করলে ছবির মতো ফুটে ওঠে কিছু চিত্র। ভয়ংকর, বিভ্রান্তিকর ও এলোপাতাড়িভাবে সচিত্র মধ্যপ্রাচ্য যেন ভেসে আসে সিনেমার রিলের মতো খণ্ডে খণ্ডে। সব কিছুই ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে ও পরার্থে ঘটে চলেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে এক বিশৃংখল ভূমির অপর নাম হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গৃহযুদ্ধ, জোয়ারের মতো ফুঁসে ওঠা প্রবল গণবিদ্রোহ-বিক্ষোভ, সরকারবিরোধী বাধাভাঙা আন্দোলন, সীমান্ত যুদ্ধ, সশস্ত্র বিপ্লবের ডামাডোল, মুহুর্মুহু আÍঘাতী গাড়িবোমা হামলা এসবই এখন মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ইতিহাসের স্বাভাবিক ঘটনা। এসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নাম, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রÑ এমন প্রশ্নের মুখে দেখা যাচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে আর মধ্যপ্রাচ্য নেই। যুক্তরাষ্ট্রও একবার ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য তাদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু নয়। তাছাড়া বহুদিনের বাধাধরা দৃষ্টিতে যেভাবে ভাবা হতো, তেলসম্পদ ও বিশৃংখলার উৎসভূমি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যকে ব্যবহার করেছে বিশ্বের পরাশক্তিরা। তাও আজ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। কারণ তেল সম্পদ দখল ও আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ব্যাপারটি নিয়ে বেশ তৎপর কূটনীতির প্রয়োগ করছে মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা। বিশ্বনেতাদের প্রতি তারা বারবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছেন, আর একবিন্দু তেলও অবৈধ উপায়ে যেন মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড থেকে নেয়ার পাঁয়তারা করা না হয়। এদিকে কয়েক শতক ধরেই নানা সংঘাত ও আদর্শিক দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়েও মধ্যপ্রাচ্য চলছে ছন্দহীন বাদ্যযন্ত্রের মতো। ধর্মীয় আইনের কড়াকড়ি থাকলেও সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে তা আলাদা ও সাংঘর্ষিক। এক সীমান্ত পার হলেই ধরা পড়ে এসব আইনি ফারাক। জুতা পরা থেকে বিমানে চড়া প্রতিটি বিষয়েই আইনের তফাৎ আছে। কিন্তু সব আইনের উৎস একই ধর্ম ইসলাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই তা প্রবাহিত-প্রসারিত। মিসর : ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে একনায়ক শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নবযাত্রায় শামিল হয়েছে মিসর। কিন্তু গণতন্ত্রে যেন পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না জনগণের ভোটে নির্বাচিত মিসরের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী রকম হবে তা খানিকটা নির্ভর করে মিসরের ওপর। কিন্তু মুরসি যেন একনায়কের নবরূপে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির মতো ধর্মপুরুষের আসনটি দখল করতে চাইছেন। ফলে এক প্রতিবিপ্লবের ডাক দিয়ে রাজপথে আগুনঝরা আন্দোলনে নেমেছে মুরসিবিরোধীরা। মিসরের সাম্প্রতিক এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ নীতিগত দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ইরান : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মুসলিম বিশ্বের সম্প্রসারণ ও জাগরণের নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করছে। সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠীগুলোকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ ও রসদ জুগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। ফলে বিশ্বনেতাদের আশংকা, ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র গেলে তা পুরো বিশ্বকে অশান্ত করে তুলবে। একটি সাম্প্রদায়িক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে বিশ্ব। ইসরাইল-ফিলিস্তিন : ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষও ধর্মকেন্দ্রিক। ইসরাইলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনের পক্ষে মুসলিম দেশগুলো অবস্থান করছে। সিরিয়া : সিরিয়ার গৃহযুদ্ধও আদর্শগত ও ধর্মীয় অনুশাসন দ্বারা পরিচালিত। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনকে ‘একব্যক্তির শাসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে গণতন্ত্রের দাবিতে লড়ছে বিদ্রোহীরা। উভয় পক্ষেরই বিরুদ্ধেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশৃংখলার জন্য আদর্শিক দ্বন্দ্ব প্রধান হলেও এ দ্বন্দ্বকে যুদ্ধে পরিণত করতে সুযোগ বুঝে হাওয়া দিতে ভোলেনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
সুত্র: সিএনএন
Leave a Reply