নির্বাচনের আগে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের অবস্থানকে সংঘাতের আলামত হিসেবে দেখছেন বিশিষ্টজনরা।
তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে মনে হচ্ছে আলোচনার চেয়ে সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের জনগণকেই এর খেসারত দিতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিবিদদেরই সমাধান বের করতে হবে। এক্ষেত্রে আলোচনার বিকল্প নেই।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, নির্বাচন বিষয়ে সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বেন না তিনি। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, জনগণের বাতাসে চুল উড়ে সরকার দিশেহারা হয়ে যাবে। যদিও খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সমঝোতার আহ্বান ছিল।
সার্বিক পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, দু’টি দলই অনড় অবস্থানে রয়েছে। ফলে সংঘাত অনিবার্য। অতীতেও দু’টি দল সংঘাতের রাজনীতিতে জড়িত ছিল। ভবিষ্যতেও তারা সংঘাতের রাজনীতি থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসাও তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই কোন সমাধানের দিকে যাচ্ছে না। তাই পরিস্থিতি এখন সংঘাতের দিকে। প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, তিনি কোন ছাড় দিতে রাজি নন। বিরোধী দলও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তাই পরিস্থিতি এখন আনকমপ্রমাইজিংয়ের দিকে। সংঘাত ছাড়া বিকল্প কিছু দেখছি না।
সংঘাত এড়ানোর কোন কৌশল আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু’টি দলই যখন তাদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছে তখন আমি কেন কোন প্রতিষ্ঠানই সমাধান বের করতে পারবে না। এই সমাধানের বিষয়টিও তাদের কাছেই আছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এ বিষয়ে বলেন, পরিস্থিতি দেখে যা মনে হচ্ছে সংঘাত হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের জান-মাল, অর্থ, ধন সম্পদের কতটা ক্ষতি হয় সেটাই দেখার বিষয়। বিবদমান রাজনীতিতে যখন সমান শক্তির দু’টি দল সংঘাতের পথ বেছে নেয় তখন নিরপরাধ জনগণকে এর খেসারত দিতে হয়।
রাজনৈতিক এ সঙ্কট তৈরির জন্য প্রধান দুই দলকেই দায়ী করে বিশিষ্ট এ আইনজীবী বলেন, সংবিধান সংশোধন করে এ সঙ্কট তৈরি করার জন্য আওয়ামী লীগ যেমন দায়ী তেমনি বিরোধী দলের ওপর এর দায় বর্তায়। কারণ বিএনপিও সঙ্কট সমাধানের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দেয়নি। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। তত্ত্বাবধায়কের বিকল্প কি কি শর্ত হতে পারে এ ধরনের প্রস্তাব বিএনপি দিতে পারতো।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দুই পক্ষ আগে থেকেই তাদের অনড় অবস্থানের কথা বলে আসছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন সেটাকে সিরিয়াসলি নিতে হয়। তবুও আমরা আশা করছি, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলো একটা সমাধান বের করবে। কারণ সময় খুব কম। অক্টোবরের শেষ দিকে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, দু’টি প্রধান দলের অনড় অবস্থানের কারণে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কোন ধরনের সমঝোতা হচ্ছে না। বর্তমান অবস্থা একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির ইশারা করছে। তবে আমরা তো সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে যেতে পারি না। দেশের জনগণ এ নিয়ে শঙ্কিত। তারপরও আশা করবো, রাজনীতিবিদরা একটা সমাধান বের করবেন। কারণ তারা দেশ চালান। তারাই জনগণের ভাল-মন্দ বোঝেন। অবশ্যই তারা জনগণের স্বার্থে একটা সমঝোতায় আসবেন।
Leave a Reply