শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: আর মাত্র দু’দিন পরেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি হবেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি।
এতো ক্ষমতাসম্পন্ন একজন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা ঠুকে দিয়েছেন সামার জারভোস নামে এক যুবতী।
মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে ওই মামলা দায়ের করেন তিনি। এর আগে লস অ্যাঞ্জেলসে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেড।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যে প্রায় ডজনখানেক নারী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন সামার জারভোস তাদের অন্যতম।
তিনিও নির্বাচনী প্রচারণার সময় অভিযোগ এনেছিলেন যে, ডনাল্ড ট্রাম্প তার কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
তার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। সামার জারভোস মামলায় দাবি করেছেন তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি তাকে অবমাননাকর বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি মানসিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, এক সময় ডনাল্ড ট্রাম্পের টেলিভিশনে রিয়েলিটি শো দ্য অ্যাপ্রেন্সিস এর প্রতিযোগী ছিলেন সামার জারভোস। মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, ৮ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। তার কয়েক সপ্তাহ আগে অক্টোবরে তিনি ও অন্য কয়েকজন নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।
কিন্তু তা অস্বীকার করেন ট্রাম্প। নতুন করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগকে তার মুখপাত্র হোপ হিকস হাস্যকর বলে অভিহিত করেছেন।
উল্লেখ্য, সামার জারভোস ও অন্য ‘নির্যাতিত’ নারীর পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন উচ্চপদস্থ এটর্নি গ্লোরিয়া অলরেড। হোপ হিকস তার সম্পর্কে বলেছেন, গ্লোরিয়ার কাছে এমন আরো অনেক আছে। হাস্যকর এসব কাহিনীর কোনো সত্যতা নেই। যখন নির্যাতিত নারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন তখন তারা টুইটার, বিবৃতি, সাক্ষাৎকার ও নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
নির্বাচনের আগে ১৪ই অক্টোবর নর্থ ক্যারোলাইনার চার্লটিতে এক নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, অভিযোগকারীরা তার নির্বাচনী প্রচারণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে প্রকাশ্যে বানোয়াট কাহিনী প্রকাশ করছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সামার জারভোস যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার কয়েক ঘণ্টা পরেই চার্লটিতে ট্রাম্প সমাবেশে বলেন, অল্প কিছু মানুষ নিজেরা বিখ্যাত হওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলছে। হতে পারে এর পিছনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
এমন মন্তব্যের কারণে সামার জারভোস তার মামলায় বলেছেন, ট্রাম্পের মিথ্যা বিবৃতি সামার জারভোসের সুনাম, সম্মান ও মর্যাদার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ট্রাম্প দাবি করেছেন সামার জারভোস ও অন্য নারীরা তার সম্পর্কে যে অভিযোগ এনেছেন তা ভুয়া। বিশেষ করে সামার জারভোস নিজে বিখ্যাত হতে ‘ফোনি’ কাহিনী সাজিয়েছে।
মামলার আগে লস অ্যাঞ্জেলসে সংবাদ সম্মেলনে সামার জারভোস দাবি করেন, এমন অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে ডনাল্ড ট্রাম্পকে। সামার জারভোস মামলায় আরো বলেছেন, আমি চেয়েছিলাম ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে ফিরে যাবেন।
কিন্তু তিনি যেহেতু তা করেননি তাই আমার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়া আমার সামনে কোনো বিকল্প ছিল না। এ জন্য সম্ভাব্য সব রকম ক্ষতিপূরণ চান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমা প্রার্থনা ও দোষ স্বীকার করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তার আইনজীবী অলরেড অনেক যৌন নির্যাতনের মামলা নিয়ে লড়ছেন। যৌন হয়রানির অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় বিখ্যাত কমেডিয়ান বিল কসবি।
সংবাদ সম্মেলনে অলরেড বলেছেন, ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে আসবেন এমনটাই চাই আমরা। মামলায় বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে নিউ ইয়র্কে নিজের অফিসে অনুমতি না নিয়েই ট্রাম্প চুমু দিয়েছিলেন সামার জারভোসকে।
পরে একই কাণ্ড ঘটান ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলিতে একটি হোটেলে। স্পর্শ করেন তার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ। তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সবই করেন তাকে একটি সম্ভাব্য চাকরি দেয়ার নাম করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফাঁস হয়ে যায় ট্রাম্পের ২০০৫ সালের একটি ডিভিও। তাতে তিনি নারীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
এর পরই সামার জারভোস ও অন্য নারীরা তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের’ বিষয়ে মুখ খোলেন। তারা সবাই প্রায় একই রকম বর্ণনা দেন। ওই ভিডিওর জন্য ট্রাম্প পরে ক্ষমা চান। বলেন, ওই ভিডিওতে যে কথোপকথন রয়েছে তা একটি বদ্ধঘরের সংলাপ। এর সঙ্গে প্রকৃত আচরণের কোনো সম্পর্ক নেই।