এস আই মুকুল: এক সময়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য পাঁচ বার নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে ৮০ বছর বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন বিধবা ছলেমা খাতুন। তবু ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতা কিংবা বয়স্ক ভাতা।
পাননি ভিজিএফ, ভিজিডিসহ অসহায় মানুষের জন্য দেওয়া সরকারের কোনো সুযোগ সুবিধা। বার বার সাহায্য চেয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে কোনোমতে চলছে তার জীবন সংসার। তার প্রশ্ন আর কত বয়স হলে তিনি ভাতা পাবেন?
তজুমদ্দিনের চুকুন আলী রাঢ়ী বাড়ির আবদুল আলী রাঢ়ীর মেয়ে ছলেমা খাতুন। জাতীয় পরিচয়পত্রে ৮ অক্টোবর ১৯৩৭ইং জন্ম তারিখ অনুযায়ী ছলেমা খাতুনের বর্তমান বয়স ৭৯ বছর তিন মাস। তার স্বামী তজুমদ্দিনের চাঁদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দড়িচাদপুর গ্রামের চাঁনগাজী পাটওয়ারী বাড়ির হারিস আহমেদ পাটওয়ারীর ছেলে মৃত জেবল হক পাটওয়ারী। প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী মারা যান।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পাঁচবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে বর্তমানে অন্যের জায়গায় বসবাস করছেন ছলেমা খাতুন। তিন ছেলে এক মেয়ের সংসারে অভাব অনটনে মেয়েকে শুধুমাত্র কোরান শরীফ পড়ালেও ছেলেরা যেতে পারেনি স্কুলের গন্ডিতে। দিন মুজুর সন্তানরা বিয়ে করে যে যার মতো পৃথক হয়ে যান। ছোট ছেলে আবদুল হকের চার মেয়ের সংসারে বোঝা হয়ে কিছু দিন চলার পর অসহায়ত্বের মাঝে তিনি হাত পেতে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন।
ছলেমা খাতুন বলেন, আগে এই বাড়ি ওই বাড়িতে কাজ-কাম করি খাইতাম, অহন পারিনা। শইল্লে বল শক্তি পাই না, দুরের আডে (বাজারে) জাইতাম পারিনা। পেডের জ্বালা মেডাইতে মাইনষের কাছে হাত পাইত্যা খরাত (ভিক্ষা) কইরা জীবন বাচে। বর্ষা আইলে বৃষ্টিরলাই বাইর অইতাম হারি না, উয়াস (না খেয়ে) থাই দিন কাডাই।
চেরমন (চেয়ারম্যান) মেম্বর বেকের দ্বারে গেছি, কেউ এক্কান কাড (ভাতার কার্ড) করি দেয় না। সরকার আংগোর লাই (আমাদের জন্য) সুবিধা দেয়, হেরা মোগোরে দেয় না। আল্লাহর কাছে বিচার থুইছি, যদি কারো দয়া অয়।
চাঁদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার এমএন জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী বলেন, আমি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছি মাত্র ছয় মাস হয়েছে। এর মধ্যে যারা সামনে পড়েছেন তাদের কয়েকজনকে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা দেওয়া হয়েছে। মনে হয় বিধবা ছলেমা খাতুনের বাড়ি আমার ওয়ার্ডে নয়। তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এ ব্যাপারে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হেলাল উদ্দিন দর্জি ও চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।