নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে দেশজুড়ে পালিত ভিজিট মাই মস্ক অপেন ডে উপলক্ষে ৫ই ফেব্রুয়ারি রোববার মসজিদগুলো নন-মুসলিম নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছিলো। ওইদিন দেড় শতাধিক মসজিদ নন-মুসলিমদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
মসজিদগুলোতে নারী পুরুষের ঢল নামে। বিশেষ করে ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করে। সারাদিনই দলে দলে আসতে থাকেন খৃস্টান, ইহুদীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ। তাঁরা মসজিদটি ঘুরে দেখেন।
মসজিদ যে উপসনার স্থান, এখানে গোপনীয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়না। এ ধরনেরই একটি স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে ফিরে যান তারা।
অন্যান্য মসজিদের মতো ইস্ট লন্ডন মসজিদও সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত ছিলো। ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে নন-মুসলিমদেরকে মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখান গাইডরা। আগতরা দেখতে পারেন মুসলমনরা কীভাবে নামাজ পড়েন, নামাজের আগে কীভাবে অজু করতে হয়।
এ সময় ইসলামের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে সম্পর্কে তাঁরা জানতে চান। ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে তাদের মধ্যে বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। ইস্ট লন্ডন মসজিদের নন-মুসলিম ভিজিটিং সেন্টারে সারাদিনই ছিলো মানুষের ভীড়। আগতরা সেখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার দৃশ্য অবলোকন করেন। মাথায় ওড়না পরে অত্যন্ত মার্জিত পোশাকে নারীরা মসজিদে প্রবেশ করেন।
সারাদিনে সহস্রাধিক নন-মুসলিম ইস্ট লন্ডন মসজিদ ঘুরে দেখেন। ইস্ট লন্ডন মসজিদে এ প্রতিবেদকের কথা হয় ক্রিস্টফার হিউজ নামে একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সাথে। পেশায় তিনি মিউজিক রেকর্ড প্রডিউসার।
মসজিদ ভিজিটের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শনিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচির কথা জানতে পারেন। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায়ও দিবসটির প্রচারণা দেখতে পান।
এ থেকেই মূলত: মসজিদ ভিজিট করতে আগ্রহী হন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে মূল ধারার মিডিয়ার নানা অপপ্রচার তাকে ইসলামের ব্যাপারে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে। বিশেষ করে বিশ্বের সাতটি দেশের মুসলমানের উপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি ইসলাম সম্পর্কে তাঁকে আরো জানতে আগ্রহী করে।
তিনি মুসলমানদের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনালড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটা সম্পুর্ণ ভয়ংকর একটি সিদ্ধান্ত। মুসলমনরা তাদের নিজস্ব ধর্মকর্ম করছে। শান্তিপুর্ন জীবনযাপন করছে। সমাজের সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে জীবনযাপন করছে। তাঁরা কোনো অবস্থায় বৃটিশ সোইটির জন্য হুমকী নয়।
মসজিদ ঘুরে দেখে কী শিখলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রিস্টফার বলেন, আমার কাছে মনে হলো, খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটি জায়গায় মিল আছে। খৃষ্টানরা চার্চে যান, উপাসনা করেন। তারা কমিউনিটির মানুষের হাসি-কান্নায় এগিয়ে আসেন। ঠিক তেমনি মুসলমনেরাও মসজিদে যান। নামাজ পড়েন। তাদের কমিউনিটির মানুষের সুখ-দুঃখে সাথী হন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি আইয়ূব খান বলেন, ডানপন্থী মিডিয়ার অপপ্রচার মুসলমানদের সম্পর্কে নন-মুসলিমদের মধ্যে নানা নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। আজকের এই ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসূচি তাদের সেই ভয় দূর করতে ভুমিকা রাখবে। তিনি মসজিদ পরিদর্শনে আগতদের ধন্যবাদ জানান।
জনাব আইয়ূব খান বলেন, জাতীয় এই কর্মসূচি ছাড়াও বছরজুড়ে দুই মাস অন্তর অন্তর ইস্ট লন্ডন মসজিদে অপেন ডে আয়োজন করে থাকে। বিপুল সংখ্যক নন মুসলিম এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তিনি বছরজুড়ে চলমান ওই অপেনডে তে অংশগ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
মসজিদের নির্বাহী পরিচালক দেলওয়ার খান বলেন, এই বছর ভিজিট মাই মস্ক অপেন ডেতে নন মুসলিমদের ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হয়েছে। গত বছর ৫ শতাধিক মানুষ ইস্ট লন্ডন মসজিদ পরিদর্শন করেছিলেন। কিন্তু এ বছর ভিজিটরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাত্র ৬ ঘন্টা সময়ে সহস্রাধিক নন মুসলিম ইস্ট লন্ডন মসজিদ ভিজিট করেছেন।
তিনি বলেন, ইসলাম সম্পর্কে যতবেশি অপপ্রচার চালানো হয়, ততবেশি মানুষের ইসলাম সম্পর্কে জানার যে আগ্রহ দেখা যায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের সেক্রেটারি জেনারেল হারুন খান বলেন, এ বছর তৃতীয়বারের মতো সারাদেশে ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচি পালিত হলো। ২০১৫ সালে সারাদেশে ২০টি মসজিদ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। পরের বছর অংশগ্রহণ করে ৮০টি মসজিদ।
আর এ বছর অংশগ্রহণ করছে দেড়শতাধিক মসজিদ। প্রতি বছর মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশা করছি, এ বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মুসলিম-নন মসলিম মসজিদগুলো ভিজিট করবেন।