শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ইউরোপজুড়ে রহস্যজনক তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে। তবে কেন, তার উত্তর কেউ জানে না। মনুষ্যসৃষ্ট তেজস্ক্রিয় পদার্থ আয়োডিন-১৩১। পুরো ইউরোপে স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে এ পদার্থটি।
কর্মকর্তাদের মতে, জানুয়ারির শুরুর দিকে উত্তর নরওয়েতে প্রথম দেখা যায় এ পদার্থ। এরপর ধীরে ধীরে পুরো ইউরোপে বিস্তার লাভ করে তা।
কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ বিষয়টি স্বীকার করেছে। জানুয়ারিতে এর অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তারা এতদিন এ বিষয়ে নীরব ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় এর উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়।
এই পদার্থ কিভাবে ইউরোপে এলো এবং কিভাবে এর বিস্তার ঘটলো সে বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় হয়তো তারা এ খবর এতদিন প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে নতুন করে পাওয়া তথ্য বিষয়টিকে আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। আয়োডিন-১৩১ সাধারণত অন্যান্য তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঙ্গে মিশে থাকে।
কিন্তু ইউরোপে যে আয়োডিন পাওয়া গেছে তা অন্য কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় ছিল না। এর আয়ুষ্কাল খুবই ক্ষণস্থায়ী- একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরমাণু ভাঙ্গতে যে সময় লাগে তার অর্ধেক। ইউরোপে যে পরিমাণে আয়োডিন-১৩১ পাওয়া গেছে তাতে এটা বোঝা যায় যে, এই তেজস্ক্রিয় পদার্থটি অতি সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে। তা নাহলে স্বল্প আয়ুর কারণে এর অস্তিত্ব পাওয়া যেত না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কে ইউরোপে এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে দিয়েছে?
এর জন্য দায়ী কে? এ প্রশ্নের আপাতত কোনো উত্তর নেই। তবে ষড়যন্ত্র নিয়ে কাজ করেন এমন তাত্ত্বিকরা আঙ্গুল তুলেছেন নরওয়ের দিকে। তারা মনে করছেন, নরওয়ে থেকে ওই তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
কারণ ওই দেশটিতে এরই মধ্যে গোপনে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে থাকতে পারে রাশিয়া। পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় আয়োডিন-১৩১।
বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক পরীক্ষার পর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চেরনোবাইল ও ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র দুর্ঘটনার পরও এর অস্তিত্বর পাওয়া যায়। তবে ক্যান্সার ও অন্যান্য অসুস্থতার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয় আয়োডিন-১৩১।
এ পদার্থটি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া যাওয়া থেকে এটাই অনুমেয় যে, কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে এটি লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে তারা রিপোর্ট করেন নি বা জানায় নি।
তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কোথা থেকে এই তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। ধরে নেয়া যায় পূর্ব ইউরোপের কাছের কোনো স্থান থেকে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ফরাসি পারমাণবিক নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা আইএরএসএন বলছে, ইউরোপে বর্তমানে যে মাত্রায় আয়োডিন-১৩১ ছড়িয়ে পড়েছে তা তাৎক্ষণিক হুমকি জন্য। তারা বলেছে, ইউরোপের একই রকম পাঁচটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত রিং অব ফাইভ’কে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, যাতে তারা আরো অনুসন্ধান করতে পারে।