শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া কানেকশন ও নির্বাচনে রাশিয়ার জালিয়াতি’র নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিএনসি) চেয়ারম্যান টম পেরেজ।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে এমন দাবি জানিয়েছেন ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান অনেক কংগ্রেসম্যানও। তাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সর্বশেষ তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন টম পেরেজ। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দোস্ত ভ্লাদিমির পুতিন জালিয়ারি করেছেন কিনা তা আমাদের জানা প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে কোনো নিরপেক্ষ তদন্তে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না এটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার ভাষায়, মুরগি পাহারা দিচ্ছে খেকশিয়াল দেশের ভিতরের যেকোনো খেকশিয়াল এমনটা বললে তা হবে অন্যায্য।
এর আগে সিআইএ, এফবিআই এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক জেমস ক্লাপার জুনিয়র বলেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজে সুবিধা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল রাশিয়া।
এরপর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অবরোধ নিয়ে গোপনে আলোচনা করেছেন। এমন স্ক্যান্ডালের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর আরও কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
নির্বাচনের সময় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ইস্যু ও নির্বাচন পরবর্তীতে রাশিয়ার ওপর আরোপিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়ে উপদেষ্টাদের গোপন আলোচনা ট্রাম্প প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়ার দিকই ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে এ আলোচনাটি নতুন করে জোরালো রূপ পায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।
এর ফলে বেশ কিছু কংগ্রেশনাল কমিটি ট্রাম্প-রাশিয়া কানেকশনের বিষয়ে হোয়াইট হাউজের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান, ক্যালিফোর্নিয়ার ড্যারেল ইসা তো সরকারি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বসেছেন। ওদিকে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র থাকার কথা অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এ সংক্রান্ত রিপোর্টকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে এ ইস্যুটি রোববার ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এফবিআই। তিনি এবিসি টিভিকে বলেছেন, এরই মধ্যে এফবিআই বলেছে ওই রিপোর্ট (রাশিয়া সংক্রান্ত) সঠিক নয়। এটা ছিল তাদের কথা। তাই আমি আমার মা’র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
ট্রাম্প টিম ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে প্রকাশ্যে এখনও কোনো মন্তব্য করে নি এফবিআই। এরই মধ্যে জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগটি বাতিল করে দিতে এফবিআইয়ের সিনিয়র এজেন্টদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস। তবে এফবিআই সে অনুরোধ রাখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ওদিকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট রিপোর্ট করেছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার ইস্যুটিকে পিছনে ফেলে দেয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন গোয়েন্দা সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তাদের ও কংগ্রেস সদস্যদের একটি তালিকা করেছে। হোয়াইট হাউজের নির্দেশনা মতো রাশিয়া নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে উত্থাপিত অভিযোগের চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা তাদের।
ওহাইও থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলের কংগ্রেসম্যান জিম জর্ডান বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কাজ করতে দিন। প্রয়োজন যা হবে তার চেয়েও বেশি তদন্ত করে দেখা হবে। তদারকি কমিটিতে আমি আছি। যা পাওয়া যাবে তদন্তে তাই প্রকাশ করবো আমরা। আমাকে দলের পক্ষ থেকে কেউ শিথিল হতে বলে নি। এনবিসি নিউজ ও দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, রাশিয়া কানেকশনের কংগ্রেসনাল তদন্ত সমর্থন করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনি।
ওদিকে দলীয় সম্মেলনে দলীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দ্রুত সমালোচনা শাণিয়েছেন টম পেরেজ।