শীর্ষবিন্দু নিউজ: ব্রিটেনের কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাপ্য পরিশোধের বিষয়ে ব্রিটেন একটি পেনিও না দিয়ে ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ করতে পারে। ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর আগেই মাঠ গরম হতে চলেছে।
ব্রিটেনের কাছে ইইউর পাওনা ক্ষেত্রবিশেষে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার হতে পারে। আবার ভিন্নভাবে হিসাব করলে পাওনা ৬ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সরকারকে এখন এ চাঁদা পরিশোধের আর্থিক ও রাজনৈতিক মূল্য নিরূপণ করতে হবে। একই সঙ্গে আলোচনা থেকে আদায়যোগ্য সম্ভাব্য লাভের পরিমাণও হিসাব করতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে চলতি মাসের শেষ দিকে ব্রাসেলসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।
ব্রিটেনের হাউজ অব লর্ডসের সদস্যরা বলেছেন, নতুন কোনো বাণিজ্য চুক্তি ছাড়া খালি হাতে বেরিয়ে আসতে হলে ব্রিটেন ইইউকে চাঁদা দিতে আইনত বাধ্য থাকবে না। গত শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কমিটি ব্রিটেনের বিদায়ী বিল তৈরির কয়েকটি পন্থা উপস্থাপন করেছে। ইইউর সদস্য হিসেবে জোটের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রতিশ্রুতি চাঁদা না দেয়ার বিষয়কে ভিত্তি করে বিলের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
লর্ডস কমিটির চেয়ারম্যান কিশোয়ার ফকনার বলেন, ব্রেক্সিটের পর ইইউ বাজেটে চাঁদা দিতে ব্রিটেন বাধ্য নয় বলে আমরা মনে করছি। কিন্তু ব্রেক্সিট আলোচনায় এ অর্থ পরিশোধের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের সিদ্ধান্ত অথবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের নগদবিহীন ৬ হাজার কোটি ইউরো (৫ হাজার ২শ’ কোটি পাউন্ড) প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য নয়। হাউস অব লর্ডসের ইইউ আর্থিকবিষয়ক উপকমিটির একটি বিশ্লেষণমূলক রিপোর্টে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
রিপোর্ট প্রণয়নকারীরা বলেছেন, ইইউকে কোন ধরনের অর্থ পরিশোধ না করতে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে জোরাল আইনগত ভিত্তি রয়েছে। অর্থ দাবি করার মতো ব্রাসেলসের পক্ষে কোন বাস্তবসম্মত কারণ নেই। তারা বলছেন, ব্রিটেন যদি ইইউর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বা জোট ছাড়ার পরও একক বাজার ব্যবস্থায় থাকতে আগ্রহী হয় সেক্ষেত্রে বাজেটসম্পর্কিত চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইইউ আর্থিকবিষয়ক উপকমিটির প্রধান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির লেডি ফকনার অব মারগ্রাভিন বলেন, ব্রেক্সিটপরবর্তী ইইউ বাজেটের বিষয়ে যুক্তরাজ্য শক্তিশালী আইনগত অবস্থানে রয়েছে। এটি ৫০ ধারা অনুসারে ইইউ ত্যাগসম্পর্কিত আলোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে।
তিনি আরও বলছেন, আইনগতভাবে ইইউ ছাড়ার পর ব্রিটেন ইইউ বাজেটের অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য নয়। পূর্ব প্রতিশ্রুতিমাফিক অর্থ পরিশোধ করলে তার জন্য কী পরিমাণ আর্থিক ও রাজনৈতিক মাসুল গুনতে হতে পারে সেটি এখন সরকারকে নিরূপণ করতে হবে। এছাড়া ব্রেক্সিট আলোচনা থেকে কী কী অর্জন বের হয়ে যেতে পারে সেগুলোও সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে হাউস অব লর্ডসের উপকমিটির রিপোর্টটি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের বাজেট কমিটির প্রধান ইনজেবোর্গ গ্রাসল। তিনি ওই রিপোর্ট নিয়ে আসলেই হতাশ’ হয়েছেন। তিনি বলছেন, অর্থ এখন মূল বিষয় নয়। মূল কথা হলো দায়িত্বশীলতা। প্রশ্ন হলো, নিজেদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলার দায়বদ্ধতা কি আপনাদের নেই?
তিনি বলছেন, বেক্সিট আলোচনাকে ব্রিটেন গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। আমাদের কাছে এ আলোচনা পুরোপুরি বিবাহবিচ্ছেদের মতো। বিচ্ছেদের পর অর্থ, সন্তান-সন্ততি এমনকি পোষা প্রাণীরও দায়িত্ব কে কতটা নেবে সেটি আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিতে হয়।
অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকারের আচরণ দেখলে মনে হয় তারা যেন একটি গলফ ক্লাব ছেড়ে দিতে যাচ্ছে। ইনজেবোর্গ গ্রাসল জার্মানির একজন মধ্য ডানপন্থী রাজনীতিক। ইইউর প্রধান ব্রেক্সিট আলোচক মাইকেল বার্নিয়ারও ওই রিপোর্ট নিয়ে হতাশ হয়েছেন।
ব্রিটেন কোন অর্থ না দিয়ে ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করতে পারে এমন খবর শনিবার হাউস অব লর্ডসের একটি রিপোর্টে এমন মন্তব্যের পর ব্রেক্সিট বিষয়ক আলোচনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।