শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহল থেকে নারী শিশুসহ এ পর্যন্ত ৫৫ জিম্মি বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ আটকে পড়া ২৯টি পরিবারের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন ‘টোয়ালাইট’ শুরু হওয়ার পর শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ২৯টি পরিবারের অর্ধশতাধিক লোককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যরা।
এখন ওই ভবনের নিচ তলায় অভিযান শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনের ওপর ভাগের ২৪টি পরিবারের ৫৫ জন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন নিচ তলায় বাকি পাঁচ পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের পরপরই নিচ তলায় যে ইউনিটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে , সেখানে অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে, দুপুর ১২টায় ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে। বৃষ্টি থামার কিছুক্ষণ আগে বিদ্যুৎও চলে এসেছে। অভিযানের এক পর্যায়ে ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ ছিল না।
পুলিশের ধারণা মর্জিনা নামে কোড ব্যবহার করে জঙ্গিরা ওই বাসায় অবস্থান নিয়েছে। বাসায় নব্য জেএমবি নেতা মুছা থাকতে পারে, এমন ধারণাও পোষণ করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা জানান, সকাল সোয়া ৭টায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা আল্লাহ আকবার বলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে সকাল ৯টা থেকে পুলিশ ভবন লক্ষ্য করে একের পর এক গুলি ছুড়ছে।
এর আগে সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে লে. কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে আতিয়া মহলে এ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে অংশ নিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো সদস্যরা।
শনিবার সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অপরেশন স্প্রিং রেইন নামে অভিযান শুরুর কথা বলা হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনী এ নাম পরিবর্তন করে অপারেশন টোয়ালাইট রেখেছে। ইতিমধ্যে জঙ্গি আস্তানার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। শনিবার রাত সোয়া ৩টার পর একটি সাদা রংয়ের গাড়িতে করে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে জঙ্গির আস্তানায় অপারেশন টোয়াইলাইটে সেনাবাহিনী ঢুকে পড়ার পর পাশের একটি সাদা রংয়ের ভবন থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ওই ভবনেও জঙ্গিদের অবস্থান রয়েছে।
এরই মধ্যে সবুজ রংয়ের ভবনটিতে ঢুকে সেনাবাহিনী ৫৫ জিম্মিকে উদ্ধার করেছে।এই ভবনে ২৮টি পরিবারের বসবাস। যাদের অনেকেই এখনো জঙ্গিদের হাতে জিম্মি রয়েছেন বলেই ধারণা করছেন অভিযানকারীরা।
জঙ্গিরা পুলিশের আহ্বানের পরও আত্মসমর্পণে সাড়া না দেওয়ায় সোয়াট টিমের সঙ্গে অভিযানে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ইউনিট। শুক্রবার সারা রাত সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা বাসাটি ও তার আশাপাশের এলাকা ঘিরে রেখে অভিযান চালাতে প্রস্তুতি নেয়।
ওই এলাকায় ও তার আশপাশে বাড়ানো হয় পুলিশের সংখ্যা। বাসার চারদিক হ্যাজাক লাইট দিয়ে আলোকিত করে রাখা হয়। বাসাটির ৫তলা ও ৪তলা দুটি ভবনের সবকটি ফ্লাটে ২৮টি পরিবারের লোকজন জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।
এদিকে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের রক্ত ও রক্তদাতাদেরও ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। শুক্রবার ভোর থেকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার উস্তার মিয়ার বাড়ি আতিয়া মহল ঘেরাও করে রাখে পুলিশ।
জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অপারেশন টোয়ালাইট শুরু হওয়ার আগে থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শনিাবর ভোর ৪টায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ অভিযানে অংশ নিয়েছেন সিলেট সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যরা। তাদের সহযোগিতা করছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট, র্যাব, পিবিআই ও পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার পাঠানপাড়া সড়কের পাশে অবস্থিত পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ভবনের নাম ‘আতিয়া মহল’। সিলেট নগরের আতিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী ও দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির বান্দরঘাটের বাসিন্দা সাবেক সরকারি কর্মচারী উস্তার মিয়া ওই ভবনের মালিক।