শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:১৯

২০১২ সালে সেরা দশ প্রযুক্তিপণ্য ও সেরা চার গেমস

২০১২ সালে সেরা দশ প্রযুক্তিপণ্য ও সেরা চার গেমস

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: চলে গেল ২০১২। গেল বছরের প্রথম থেকেই নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য বাজার মাত করেছে, যা শেষদিকে এসে রীতিমতো প্রযুক্তির লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এতে বাজিমাত দেখিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কম্পিউটার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম গেমস। ব্যবসায়িক সাফল্যে সবাইকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে এবং গেমারদের বিনোদনের খোরাক জোগাতে প্রতি বছর নতুন গেমের পসরা নিয়ে আসেন গেম নির্মাতারা। গত বছরে এমন কয়েকটি ছিল আলোচনায়।

২০১২ : সেরা দশ প্রযুক্তিপণ্য : বছরের প্রথম থেকেই নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য বাজার মাত করেছে, যা শেষদিকে এসে রীতিমতো প্রযুক্তির লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এ লড়াইয়ে হাতিয়ার হিসেবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে নিজ নিজ সেরা পণ্য। বাজারে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা এমনই সেরা দশ পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩। গত কয়েক বছরে নাটকীয়ভাবে স্মার্টফোনের বাজার দখল করে নেয়া স্যামসাং গেল বছর তাদের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ফোনটি বাজারে ছেড়েছে- গ্যালাক্সি এস৩। ৪.৮ ইঞ্চির অ্যান্ড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডুইচ চালিত ফোনটি প্রথমবারের আইফোনকে হারিয়ে বাজারের শীর্ষস্থান দখল করেছে। এরপর আইফোন ৫। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম- কথাটি আইফোনের জন্যই প্রযোজ্য। আইফোনের অন্যান্য সংস্করণের মতোই পঞ্চম সংস্করণও প্রযুক্তি বিশ্বকে কাঁপিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে আসে। ৪ ইঞ্চি রেটিনা ডিসপ্লে, এ৬ প্রসেসর, আইওএস ৬, কোয়াড কোর গ্রাফিক্স প্রসেসর একে আইফোন পরিবারের সেরা ফোনে পরিণত করেছে। আইপ্যাড ৩- চলতি বছর নিজেদের অন্যান্য পণ্যের মতোই আইপ্যাডকেও পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছে অ্যাপল। যার ফলস্বরূপ সেপ্টেম্বরে বাজারে আসে তৃতীয় প্রজন্মের আইপ্যাড।

মাইক্রোসফট সার্ফেস-তীব্র প্রতিদ্বনিদ্বতার বাজারে টিকে থাকার জন্য নিজেই হার্ডওয়্যার নির্মাণে নেমে গেছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। বছরের শেষদিকে বহু প্রতীক্ষার পর বাজারে আসে উইন্ডোজ ৮ আরটি চালিত মাইক্রোসফট সার্ফেস। কিবোর্ড-মাউসের যুগ পেরিয়ে যে সামনে টাচ যুগের শুরু হচ্ছে, তারই ইঙ্গিত পরবর্তী প্রজন্মের এই ট্যাবলেট। মাইক্রোসফটের মতে, আশির দশকের পর থেকে কম্পিউটার ব্যবহার ধারায় এতোবড় পরিবর্তন আর আসেনি। ম্যাকবুক প্রো উইথ রেটিনা ডিসপ্লে- আইফোনের বিখ্যাত রেটিনা ডিসপ্লে ল্যাপটপেও আনতে যাচ্ছে অ্যাপল, এমন গুজব শোনা গিয়েছিল আগেই। গত বছরের মাঝামাঝি তা বাজারে আসে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্ক্রিন রেজ্যুলুশনের ল্যাপটপ এটি। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও তাই দারুণ পাতলা ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের ল্যাপটপটি প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। নোকিয়া লুমিয়া ৯২০-মোবাইল বাজারের প্রাক্তন সম্রাট নোকিয়াকে চলতি বছর দেখা গেছে নতুন রূপে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের উন্মাদনার বিপরীতে তারা জোর লড়াই চালিয়ে গেছে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন নিয়ে। বছর শেষে বাজিমাত করেছে উইন্ডোজ ফোন ৮ চালিত লুমিয়া ৯২০ দিয়ে। আকর্ষণীয় ডিসপ্লে, ওয়্যারলেস চার্জিং, এনএফসি (নেয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন), সেন্সিসিটিভ টাচ ইত্যাদি সেরা ফিচার নিয়ে বাজারের অন্যান্য স্মার্টফোনের সঙ্গে ভালোই পাল্লা দিচ্ছে এটি।

আসুস তাইচি- উইন্ডোজ ৮’র নতুন সব বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে যেসব ব্যতিক্রমধর্মী ডিভাইস বাজারে আসতে শুরু করেছে, তাদের মধ্যে আসুস তাইচি অন্যতম। অত্যন্ত পাতলা এ ডিভাসিটি একই সঙ্গে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট। এর দুই পাশে রয়েছে দুটি স্ক্রিন, যাদের ব্যবহার করে একই ডিভাইসে দুই কম্পিউটার চালানোর স্বাদ পাওয়া যাবে। বাইরের স্ক্রিনটি টাচ হওয়ায় ল্যাপটপের ডালা বন্ধ করলেই তা ট্যাবলেট হয়ে যাবে। কিংবা দুটো স্ক্রিনকে আয়নার মতোও (মিরর মোড) ব্যবহার করা যাবে। নোকিয়া পিওরভিউ ৮০৮- ২০১২ সালের আরেকটি সাড়া জাগানো ফোন নোকিয়া পিওরভিউ। এমনিতে সাধারণ গড়নের এই ফোনটির একটি বৈশিষ্ট্যই চোখ কপালে তোলার মতো- এর ক্যামেরা ৪১ মেগাপিক্সেল! বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে ঝড় তোলার জন্য নোকিয়ার এ প্রয়াসটি আরও জনপ্রিয় হতো, যদি এতে অ্যান্ড্রয়েড বা উইন্ডোজ ফোন ব্যবহার করা হতো। তারপরও এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যামেরা ফোন হিসেবে এটি শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। গুগল নেক্সাস-আগামী বছর অ্যান্ড্রয়েডকে বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য গুগল নিজেই তৈরি করা শুরু করেছে সবচেয়ে কম মূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। তুলনামূলক শস্তা এই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অ্যাপলের ডিভাইসগুলোর প্রতিদ্বনিদ্বতা করবে বলে গুগল আশা করছে। তবে দাম কম হলেও কনফিগারশনের ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করেনি গুগল, যার ফলে অ্যান্ড্রয়েডের শতভাগ পাওয়া যাবে প্রতিটি ডিভাইস থেকেই। আসুস প্যাডফোন ২- প্যাডফোন ২ দিয়ে আবারও নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে আসুস।

গত বছরের সেরা ৪ গেমস : কম্পিউটার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম গেমস। ব্যবসায়িক সাফল্যে সবাইকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে এবং গেমারদের বিনোদনের খোরাক জোগাতে প্রতি বছর নতুন গেমের পসরা নিয়ে আসেন গেম নির্মাতারা।

অ্যাসাসিন ক্রিড-৩ : অ্যাকশন, ঐতিহাসিকতা আর গুপ্তঘাতক কাহিনীর মিশেলে গেমারদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অ্যাসাসিন ক্রিড। তৃতীয় সিক্যুয়েল পর্যন্ত চলে রমরমা বাণিজ্য। কিছুটা ভাটা পড়ে চতুর্থ পর্বে এসে। আস্থার প্রতিদান দিতে তাই উবিসফট বছর না ঘুরতেই সিরিজের পঞ্চম সংস্করণ হিসেবে নিয়ে আসে ‘অ্যাসাসিন ক্রিড-৩। যার সাফল্য হিসেবে ৩০ অক্টোবর রিলিজের আগেই গেমারদের হুমড়িতে বন্ধ হয়ে যায় আগাম বিক্রি। প্রথম সপ্তাহে বিক্রির পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৩৫ লাখের কোঠা। মাস পেরুতে এ বিক্রির পরিমাণ ৭০ লাখ কপি। সে জন্য গেমটির বর্তমান অবস্থান তালিকার এক নম্বরে।

ম্যাক্স পাইন-৩ : মারো না হয় মরো। হত্যা, গুম, অপহরণ, আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। প্রায় দশ বছর পর ম্যাক্স পাইনের নতুন সংস্করণ ‘ম্যাক্স পাইন-৩। বিখ্যাত চলচ্চিত্র রেড ডিড, রিডিম্পসন এবং গেমস সিরিজ গ্রান্ড থেফট অটোর লেখক ড্যান হাউজারের কাহিনী অবলম্বনে বরাবরের মতোই গেমটি ডেভেলপ করেছে রকস্টার। জোরালো কাহিনী আর নিখুঁত যুক্তিযুক্ত উপস্থাপনে দুর্বল দিকগুলো খুঁজতে সমালোচকদের রীতিমতো পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর অভিযোগ করার মতো তেমন কিছু খুঁজে পাননি সমালোচকরা। বাজারে ছাড়ার প্রথম তিন সপ্তাহে বিক্রির পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় সাড়ে চার লাখ কপি। সর্বশেষ তথ্যমতে নিখুঁত গেমিং আবহ হিসেবে জিতে নিয়েছে ২০১২ সালের বেস্ট গেম অ্যানিমেশন পুরস্কার।

ডিজঅনারড : দেহরক্ষীর কাজ করতে এসে নিজেই সন্দেহের তালিকায় ঠাঁই করে নেন একজন সাহসী যোদ্ধা। এমনকি মৃত্যুদন্ডের মতো শাস্তির বোঝা মাথায় নিয়ে ফেরারি হয়ে গোপন আস্তানায় করতে হবে জীবনযাপন। ফার্স্ট পারসন শুটিং গেম খেলে যারা এখন ক্লান্ত তাদের কাছে এ রকমই নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হবে কিছুটা অ্যাডভেঞ্চার ধাঁচের আততায়ীধর্মী অ্যাকশন গেম ‘ডিজঅনারড। প্রাণবন্ত  গ্রাফিক্স জাদুতে ফিরে পাওয়া যাবে ১৭ শতকের লন্ডন শহরের আদিরূপ। স্বীকৃতি হিসেবে মিলেছে সেরা রোমাঞ্চকর শ্রেণীতে স্পাইক ভিডিও গেমস অ্যাওয়ার্ড, সেরা কৃত্রিম আবহ হিসেবে ইনসাইড গেমিং অ্যাওয়ার্ডস এবং অ্যাকশনধর্মী গেমের ক্যাটাগরিতে আইজিএনের বর্ষসেরার খেতাব। সপ্তাহে চার লাখ কপি বিক্রি নিয়ে গেমটি দখলে রেখেছে তালিকায় তৃতীয় অবস্থান।

ফার ক্রাই-৩ : ফার ক্রাই সিরিজ মানেই গেমারদের জন্য নতুন চমক। বাফটা পুরস্কার বিজয়ী গল্পকার জেফরি ইয়োহালেমের গল্প অবলম্বনে ২৯ নবেম্বর উবিসফট রিলিজ করে ফার ক্রাই-৩। কাহিনীর সূত্রপাত্র এক গ্রীষ্মকালীন দ্বীপে। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে আফ্রিকান দ্বীপাঞ্চলে আসেন জ্যাসন ব্রুডি। একপর্যায়ে জলদস্যুদের হাতে অপহৃত হন তিনি। ভাগ্যগুণে সে যাত্রায় বেঁচে যান জ্যাসন। তবে বন্ধুদের করুণ পরিণতির কথা ভেবে গোপনে মিশনে নামতে অনেকটাই বাধ্য হন। জলদস্যু তাড়ানোর এই গেম প্রথম সপ্তাহে বিক্রি স্পর্শ করে তিন লাখের কোঠা।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024