ফরিদ উ আহমেদ: কাতার বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী বেশি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় মাধ্যমেই কর্মী নেবে দেশটি। বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী নেয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে তারা। কাতার সরকারের তরফ থেকে গত ৬ই জানুয়ারি বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। তারা গৃহস্থালির কাজে মহিলা কর্মীদের বেশি নিতে আগ্রহী। এ তথ্য জানিয়েছেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার।
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর এই সুসংবাদ আসছে দেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে। দেশটিতে বর্তমানে ২ লাখ ২৬০ বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। ২০১২ সালে দেশটিতে ২৮ হাজার ৮০১ জন কর্মী গেছে বাংলাদেশ থেকে। এর আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ১১১। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়ার ইচ্ছা দেখিয়েছে পারস্য উপসাগরের তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ এই দেশটি। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসেবে অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রায় ২০ লাখ কর্মীর দরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই অন্তত ৫ লাখ কর্মী নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে কাতার। সূত্র জানায়, বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২ এর আয়োজক দেশ হিসেবে বিশ্ব ফুটবলের এই মহাযজ্ঞ শুরুর আগেই নতুন করে ১৭টি পাঁচতারা হোটেল, ১০টি স্টেডিয়াম ও একাধিক নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করবে কাতার। অবকাঠামোগত উন্নয়নের এই বিশাল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ করবে দেশটি।
কাতার সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চলতি মাসের ৬ তারিখে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কর্মী নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ৪ সদস্যের কাতার প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন শেখ মোহাম্মদ হাসান আল ওবায়দী। সাক্ষাৎ শেষে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ও প্রতিনিধি দলের সদস্য শেখ মোহাম্মদ আল আতিক আল দোসাইরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট দেখে তারা অত্যন্ত খুশি। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী কাতারে নেয়া হবে। পরে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, কাতারের প্রতিনিধি দল আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। অধিক সংখ্যক কর্মী নেয়ার ব্যাপারে একাধিকবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তারা। তিনি বলেন, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে বাংলাদেশের কর্মী নেয়ার দরজা দিন-দিন খুলছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ারও প্রায় ২৪ লাখ লোক দরকার হবে বলে বিএমইটি’র মহাপরিচালক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত নভেম্বরে আমরা সে দেশ ঘুরে এসেছি। তবে সেখানে কর্মী পাঠাতে হলে ইউরোপের মান অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ওই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আরও সমপ্রসারিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত সৌদি মজলিসে শূরার স্পিকার ড. শেখ আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল শেখ। তিনি বলেন, সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ করেনি। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে মাত্র। এখন থেকে বাংলাদেশ নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সৌদিতে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারবে। বিএমইটি’র হিসেবে দেখা গেছে দেশটিতে বর্তমানে ২৬ লাখ ১১ হাজার ১ জন বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। সেখানে ২০১২ সালে গেছেন ২১ হাজার ২৩২ জন এবং এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩৯ জন কর্মী।
Leave a Reply