বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১০

বিমানের ম্যানচেষ্টার ফ্লাইট বন্ধ

বিমানের ম্যানচেষ্টার ফ্লাইট বন্ধ

গাজী মহিবুর রহমান: সহসা চালু হচ্ছে না বিমানের ঢাকা-লন্ডন-ম্যানচেস্টার সরাসরি ফ্লাইট। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে যখন নতুন এয়ারক্রাফট বোয়িং-৭৭৭ ইআর যার স্থানীয় নামকরণ করা হয় পালকি তা দিয়ে নব উদ্যমে খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে ফ্লাইট চালু করা হয়েছিল এ রুট। তখন যাত্রীদের শোনানো হয়েছিল নানা আশার বাণী। বছর পার হতে না হতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিমানের (পালকির) সেই ফ্লাইট সিডিউল। হজ্ব যাত্রী পরিবহনের কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রুটটি। হজ্ব কার্যক্রম শেষ হলেও ফের চালু হচ্ছে না এ রুটে বিমানের ফ্লাইট। কবে চালু হবে এরও কোন সদুত্তর মিলছে না।

সঙ্গে সিডিউল বিপর্যয় তো বিমানের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিমানের একটি ফ্লাইট লন্ডন থেকে নির্দিষ্ট সময়ের ১৭ ঘণ্টা পরে ফ্লাইট করায় পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে বাঙালি কমিউনিটিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। শুধু বাঙালি কমিউনিটি নয় বিশ্বপরিমন্ডলেও বিমান সম্পর্কে একটি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। যেই কারণে দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো একটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও এটি মূলত একটি কমিউনিটি বেইজড এয়ারলাইন্স কোম্পানি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে আবার বিমানের অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে কমিউনিটির অনেকেই এখন আর বিমানে চড়তে চায় না। গত সেপ্টেম্বরে হজ্বযাত্রী পরিবহনের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করা হয়েছে পালকির ঢাকা-লন্ডন-ম্যানচেষ্টার-ঢাকা ফ্লাইট। অথচ হজ্ব শেষ হয়ে বেশ কয়েক মাস চলে যাওয়ার পরও এই ফ্লাইট চালুর কোন লক্ষণ কিংবা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে নর্দান ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারস্থ অফিসে যোগাযোগ করা হলে, অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে এয়ারক্রাফট স্বল্পতার কারণে উল্লেখিত ফ্লাইটটি বন্ধ আছে। ফ্লাইটটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কিন্তু এখন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে তেমন কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’ কিন্তু কমিউনিটির সচেতন লোকজন নিশ্চয়ই ভুলে যাননি ২০১১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর নর্দার্ন ইংল্যান্ডের দায়িত্বরত ম্যানেজার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ম্যানচেষ্টারস্থ বিমান বাংলাদেশের অফিসে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ট্রাভেল ব্যবসায়ীর উপস্থিতিতে এই ফ্লাইট-এর বিস্তারিত সিডিউল এবং সুযোগ-সুবিধাদি তুলে ধরেছিলেন এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এ সময় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন- এই ফ্লাইট, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে শুধু ম্যানচেষ্টার-ঢাকা প্রথমবারের মতো সরাসরি ফ্লাইটই চালু হবে না বরং বিমান বাংলাদেশ পৃথিবীতে এয়ারলাইন্স জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এ প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার এই প্রতিনিধিকে সেদিন আরো বলেছিলেন, অতীতে বিমান যেসব উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট চালিয়েছে এবারের বোয়িং উড়োজাহাজ হবে আগের থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। বিশ্বের অন্যান্য নামী-দামী এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর সমমানের উড়োজাহাজ নিয়ে আসছে এবার বিমান এবং শুধু তাই নয় এতে অত্যাধুনিক বিনোদন ব্যবস্থাও থাকবে। তিনি সেদিন এটাও বলেছিলেন, বিমান এবং কমিউনিটি উভয়ের স্বার্থেই পালকির এই ফ্লাইটটি অব্যাহত থাকবে। ৪১৯ সিটের (ইকোনোমি-৩৮৪, বিজনেস-৩৫) বিমানের তথা পালকির ফ্লাইট সিডিউলও সবার জ্ঞাতার্থে জানিয়েছিলেন। কমিউনিটির অনেকেই সেদিন বলেছিলেন, এই ফ্লাইটে চড়ার ব্যাপারে তারা খুবই আগ্রহী। বিমানের আধুনিকায়ন, ম্যানচেষ্টার-ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং বিশ্বের অন্যান্য নামী-দামী এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর মতো যাত্রী সেবার মান উন্নত করার যে উদ্যোগ বিমান নিয়েছে এই পুরো ব্যাপারটিকে সেদিন স্বাগত জানিয়েছিলেন গ্রেটার ম্যানচেষ্টারের ট্রাভেল ব্যবসায়ী সহ পুরো কমিউনিটি। কিন্তু ২০১১ সালের ২ নভেম্বর চালু হওয়া পালকির প্রথম ফ্লাইট চালুর পর এক বছর যেতে না যেতেই ২০১২ এর সেপ্টেম্বর মাসে হজ্বযাত্রী পরিবহনের অজুহাতে বন্ধ করা হয় ফ্লাইটটি। যা নর্থ ওয়েস্ট তথা নর্দার্ন ইংল্যান্ডে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী এবং ট্রাভেল ব্যবসায়ীদেরকে চরমভাবে হতাশ করেছে। স্থানীয় বিমান অফিস সূত্রে জানা যায়, এই ফ্লাইটটি যেমন কমিউনিটির মানুষের জন্য ছিল খুবই ফলপ্রসূ ঠিক তেমনি ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এটি ছিল তুলনামূলকভাবে সফল। কারণ এই অফিসকে বাৎসরিক যে টার্গেট দেয়া হয়েছিল তা তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পূর্ণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, ২০১১ সালের ২রা নভেম্বর চালু হওয়া পালকির প্রথম ফ্লাইট থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে বন্ধ করে দেয়া পর্যন্ত সময়ে ম্যানচেষ্টারস্থ বিমান অফিস প্রায় ৫৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করেছে যেখানে তাদের বাৎসরিক টার্গেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এটাও বলেন যে, ম্যানচেষ্টার স্টেশনটি একটি রেভিনিউ আর্নিং স্টেশন। এখান থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করা সম্ভব। অথচ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে মোট লোকসান দিয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে যা ছিল ১৯৯ কোটি টাকা এবং তার আগের বছর অর্থাৎ ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ছিল ৮০ কোটি টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে এই বিমানই ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা লাভ করেছিল।

কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যানচেষ্টারে সংক্ষিপ্ত অফিসিয়াল সফরে আসলে এক অনুষ্ঠানে কমিউনিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে আনা হয়। কিন্তু মন্ত্রী তাৎক্ষণিক কোন নির্দিষ্ট সদুত্তর না দিয়ে গতানুগতিক আশার বাণী শুনিয়েছেন। বিমান সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এখন শোনাচ্ছেন নতুন আশার বাণী। কথা হয় স্থানীয় ট্রাভেলস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সিলেট ট্রাভেলসের ম্যানেজার আতাউর রহমান ফানু মিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এবার নিয়ে ৩ বার বিমান ফ্লাইট চালু করে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে বিমান তার যাত্রা শুরু করলেও কমিউনিটির কতটুকু আস্থা ফিরে পাবে তা নিয়ে আমি সন্ধিহান।’ ব্রাডফোর্ড-এর শাহজালাল ট্রাভেলসের অন্যতম সত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘হজ্বের নোটিস দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফ্লাইট বন্ধ হলেও আজ পর্যন্ত ফ্লাইট চালু হয়নি। আমরা যারা টিকিট বুকিং নিয়েছিলাম তাদের অগ্রিম টাকা ফেরত দিতে এবং তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষের জন্য। এই ধরনের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনা সরকারে বড় মাপের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা আশা করি না।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024