স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় জনগণের সাধারণ স্বপ্নগুলোও বদলে যাচ্ছে সময়ের তালে। ‘আমেরিকান ড্রিম’ নামের ভাব-বিলাসের সময় এখন আর নেই। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ‘আমেরিকান ড্রিম’ নিয়ে একধরনের সংশয়ের মধ্যে আছে। ধার-দেনামুক্ত অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে অবসরে যাওয়াকেই এখন স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
দীর্ঘদিন থেকে ‘আমেরিকান ড্রিম’ বলতে মনে করা হতো, বাড়ির মালিক হওয়া, সন্তানদের কলেজে পাঠানো, বাড়িতে কুকুর বা বিড়াল পোষা, বাড়ির সামনে একটি নয়, দুটি গাড়ি রাখতে পারা—যার একটি কাজে যাওয়ার জন্য ও অন্যটি পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। অধিকাংশ আমেরিকানের মতে, স্বপ্নের আমেরিকা এখন আর আগের অবস্থায় নেই। অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতায় স্বপ্নগুলোও বদলে গেছে ভীষণভাবে।
ক্রেডিট ডটকম পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশ আমেরিকানের আকাঙ্ক্ষা, তাঁরা যেন পর্যাপ্ত সঞ্চয় নিয়ে ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যেতে পারেন। ২৩ শতাংশের স্বপ্ন, ধার-দেনামুক্ত জীবন কাটানো। ১৮ শতাংশ লোকজন এখন বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আমেরিকায়। বাড়ির মালিক হওয়াই ছিল একসময় ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর মূল কথা। আমেরিকায় একসময় ভোটাধিকারের জন্য বাড়ির মালিকানা আবশ্যক ছিল। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে আইনটি পরিবর্তন করা হয়। তার পরও বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন তাড়া করে ফেরে সে দেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে। কিন্তু বাড়ির মালিক হওয়া ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে আমেরিকায়। বাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। ব্যাপক কর্মহীনতা, বাত্সরিক আয়ের ক্রম হ্রাস, ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের অপ্রতুলতা আমেরিকার মানুষের বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্নপূরণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমেরিকার জনপ্রিয় দৈনিক ইউএসএ টুডে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সে দেশের ৮১ শতাংশ যুব জনগোষ্ঠীর কাছে এখন ধনী হওয়ার বিষয়টিই সবচেয়ে অগ্রাধিকার পায়। ৫১ শতাংশ যুব আমেরিকান বিখ্যাত দেখতে চান নিজেকে। ধনী ও বিখ্যাত হওয়ার স্বপ্ন ও সাধনায় উদ্বেল এই যুব সমাজ এখন দেনার দায়ে জর্জরিত। শিক্ষাজীবন শেষ হতে না হতেই তাদের মাথার ওপর গড়পড়তা ২৭ হাজার ডলার ব্যাংকঋণ চেপে বসছে। এর মধ্যে আবার চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বাড়ি, গাড়ির সাধ মেটাতে গিয়ে আয়ের প্রায় সবটাই খরচের খাতায় উঠে যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ কর্মজীবী আমেরিকান পর্যাপ্ত সঞ্চয় না নিয়ে অবসরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকায় প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন জানান, জীবনে কখনো তাঁরা ঋণমুক্ত হতে পারবেন না। ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতাই জানান, ‘আমেরিকান ড্রিম’ তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।
ক্রেডিট ডটকমের বিশ্লেষক অ্যাডাম লেভিন এ প্রসঙ্গে জানান, স্বপ্ন যেমন বদলে গেছে, তেমনি বাস্তবতাও বদলেছে। আমেরিকার জনগোষ্ঠী সব সময় স্বপ্ন দেখেছে এবং তা অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছে।