সৈয়দা রুমি আহমেদ: গত বছর নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিতদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরই মৃত্যু হয়।আর এর কারণ হিসাবে খেঁজুরের রস খাওয়াই মুল কারণ বলে জানা গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) হিসাব অনুযায়, চলতি শীত মৌসুমে আট বছর বয়সি একটি শিশু নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। আরও জানা যায়, ঢাকায় মারা যাওয়া ওই শিশুটির বাবাও অসুস্থ। তারা দুজনই খেঁজুরের রস খেয়েছিলেন। খুব স্বাদ করে বাবা গত ১১ জানুয়ারি ভালুকায় খেঁজুরের রস খেয়েছিলেন। ঠিক ছয়দিন পর তাদের রোগলক্ষণ ধরা পড়ে। মৃত শিশুটির পরিবারের আট সদস্যের সবাই একই রস পান করেছেন। তাদেরকে ২১ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
সাধারণত শীতকালে বাদুরের মাধ্যমে খেঁজুরের রস থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশী। ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় আটদিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- জ্বর, প্রলাপ বকা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এদিকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, ভারতীয় সীমান্ত এলাকার জেলাগুলো থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। তবে ভারতে এ ধরনের কোনো সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করেনি দেশটি। মালয়শিয়ায় ১৯৯৮ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির সংক্রমণের কথা জানা যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অজ্ঞাত রোগ হিসেবে ২০০১ সালে দেশে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ নজরে আসে। তিন বছর পরে ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার মাধ্যমে একে নিপাহ ভাইরাস বলে সনাক্ত করা হয়। তখন থেকে এ পযন্ত দেশের ২১টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৬ জনের মধ্যে ১৩৬ জনই প্রাণ হারিয়েছেন। মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, এবং ঠাকুরগাঁসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের এলাকায় নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সকালবেলা খেঁজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, যেখানে গাছ থেকে রস সংগ্রহে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। এটি কেন নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংক্রমিত হয় এবং কেন নতুন জায়গায় ছড়ায় সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে যেসব এলাকায় খেঁজুর গাছ রয়েছে কেবল সেসব এলাকাতেই এর সংক্রমণ হয়।
ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে আইসিডিডিআরবি। তারা বলছে, বাদুরের খাওয়া ফল রসের হাঁড়িতে পড়ে গিয়ে কিংবা রস পান করার সময় বাদুরের লালায় থাকা ভাইরাস রসে মিশে যায়। এছাড়াও, রসের পাত্রে বাদুর মলমুত্র ত্যাগ করলে তার মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। সাধারণত নিপাহ ভাইরাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে পান করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না।
Leave a Reply