বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৯

বাংলাদেশে সীমাহীন দুর্নীতিতে খেলাপি ঋণের বোঝায় ব্যাংক

বাংলাদেশে সীমাহীন দুর্নীতিতে খেলাপি ঋণের বোঝায় ব্যাংক

অর্থনীতি ডেস্ক: খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে আরও ৭৪০ কোটি টাকা। এর ফলে ৩০ জুন পর্যন্ত এ খাতে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ।

তবে এর বাইরেও ৪৩ হাজার কোটি টাকা অবলোপন (রাইট অফ) করেছে বিভিন্ন ব্যাংক। এ তথ্য খেলাপির হিসাবে দেখানো হয় না। এ হিসেবে অবলোপন করা ঋণ মিলিয়ে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায়। এসব ঋণের বেশির ভাগই সরকারি ব্যাংকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানা গেছে। এ পরিমাণ অর্থ ৪টি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার না হওয়া এবং এর পেছনে সীমাহীন দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার খেলাপি ঋণের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাদের মতে, এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আগামীতে এ খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে।

জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শাস্তি না দিয়ে ঋণখেলাপিদের সুরক্ষা দিচ্ছে রাষ্ট্র। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে, ঋণখেলাপিদের সরকার বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করেছে। ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ অনেক ধরনের সুবিধা পাচ্ছে এরা। ফলে খেলাপি ঋণ কমার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যে কোনো অপরাধী যখন সুরক্ষা পায়, তখন ওই অপরাধ বাড়তে থাকে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

অন্যদিকে সবচেয়ে খারাপ দিক হল, এবার বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত তা বেড়ে ৩১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ২ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সুশাসনের অভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে করে মুদ্রা এবং পুঁজি উভয় বাজারে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছর মুনাফা থেকে বড় অংকের প্রভিশন রাখতে হয়। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ দেয়ার সময় মূল্যায়নটি সঠিকভাবে হয় না। এজন্য কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কাছে ঋণ চলে যায়। যারা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেন না। ফলে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যায়।

জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। আর ৩০ জুন পর্যন্ত তা বেড়ে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, জুন শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের স্থিতি ৭ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ।

জুনভিত্তিক এ প্রতিবেদন ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবেদন অনুসারে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৩১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা এবং সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে ৬ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল খেলাপি।

তবে সামগ্রিকভাবে জুন শেষে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কারণ ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো থেকে খেলাপি ঋণের যে তথ্য পাঠানো হয়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে ওই ঋণ আরও বেড়ে যায়। অর্থাৎ সে সময় খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়।

বিশেষ করে সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের পাঠানো তথ্যের তুলনায় পরিদর্শনে আরও ৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের ৬৯১ কোটি ও সোনালী ব্যাংক ৬৮২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ গোপন করে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ প্রান্তিকেও খেলাপি ঋণের স্থিতি আরও বাড়বে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024