নিউজ ডেস্ক: অনলাইন মাধ্যমগুলোতে হেট ক্রাইমের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্য। সোমবার দেশটির ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) এ সংক্রান্ত নতুন একটি নির্দেশনা জারি করেছে। এতে অনলাইনে হেট ক্রাইমকে গুরুতর আচরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরাধ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রধান সংস্থা সিপিএস। সংস্থাটির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে হেট ক্রাইম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের অনলাইন অপরাধকে অফলাইন অপরাধের মতোই গুরুত্ব সহকারে দেখার ব্যাপারে সিপিএস অঙ্গীকারাবদ্ধ।
হেট ক্রাইমের বিরুদ্ধে প্রকাশনা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সিপিএস। এই ক্যাম্পেইনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হেট ক্রাইট ম্যাটর্স’। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকজনকে হেট ক্রাইম বন্ধে উদ্যোগী হতে আকৃষ্ট করা এবং সংঘটিত এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে তারা যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেন; সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।
যুক্তরাজ্যের ডিরেক্টর অব দ্য পাবলিক প্রসিকিউশন্স অ্যালিসন সান্ডার্স। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে হেট ক্রাইমের একটা মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ফলে সিপিএস-এর জন্য এটা একটা অগ্রাধিকার বিষয়। এটা পুরো সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটা মানুষকে তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ভয়ের মধ্যে বাস করতে বাধ্য করে।
এই সভ্য(!) যুগেও জাতিগত বা লৈঙ্গিক কারণে মানুষ হেট ক্রাইমের শিকার হতে পারেন। সাধারণত অনলাইনে হেট ক্রাইমের জন্য ফেসবুক, টুইটার বা খ্যাতনামা নিউজ সাইটগুলোর কমেন্ট বক্সকে বেছে নেয় অপরাধীরা। ‘হিটলার ঠিক পথেই ছিলেন’-সেখানে এমনটা মনে করার মতো মানুষও হয়তো মিলবে। এই একটা লাইন বা বাক্য আরও বহু কিছুর দিকে তাদের নিয়ে যেতে পারে।
অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিও ট্রল বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও কথা হয়েছে। খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-কেউই এমন আক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষিত নন। কিন্তু জাতি, ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে কারও সঙ্গে এমন আচরণ নিন্দনীয়। এটা অপরাধ। সেটা সামনাসামনিই হোক আর অনলাইনেই হোক। এসব কর্মকাণ্ড সমাজে বিভক্তি তৈরি করছে। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।
চলতি বছরের এপ্রিলে অনলাইনে ঘটা হেট ক্রাইম মোকাবেলায় বিশেষ একটি ইউনিটের ঘোষণা দেয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। ২৪ এপ্রিল সোমবার ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনলাইনে হয়রানির বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রতিকারে কাজ করে যাচ্ছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পাঁচ সদস্যের এই ইউনিট।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ‘আমরা জানি যারা হেট ক্রাইমের শিকার হন তাদের উপর এটা কেমন ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যারা অনলাইনে এমন নিপীড়নের শিকার হন। হামলাকারীরা মনে করে, তারা বোধ হয় পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছেন। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল।’
প্রথমবারের মতো এই গঠিত বিশেষ এই পুলিশ বাহিনীকে লন্ডনের মেয়র অফিসের পুলিশিং অ্যান্ড ক্রাইম আর্থিক সহায়তা করছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের পুলিশ ইনোভেশন ফান্ড থেকে এর পেছনে ব্যয় হচ্ছে ৪ লাখ ৫২ হাজার পাউন্ড। ধারণা করা হচ্ছে দুই বছরে বিশেষ এই ইউনিটের পেছনে খরচ হবে ১৭ লাখ পাউন্ড।
সাদিক খান বলেন, ‘আমার পদক্ষেপ স্পষ্ট। এই বিষয়ে কোনও ছাড় নয়। আমরা এসব হামলার শিকারদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি। এন্টি-হেট সংগঠনগুলোর পরামর্শ নিয়ে আমরা তাদের নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা করছি। এই সংগঠনগুলো খতিয়ে দেখবে কোনটা আসলেই ক্ষতি করছে এবং নির্মূল করতে হবে।’
লন্ডন পুলিশের কাছে সব ধরনের হেট ক্রাইমেরই অভিযোগ আসে। ফেসবুক-টুইটারসহ সব সামাজিক মাধ্যমে সংঘটিত এমন অপরাধগুলো খতিয়ে দেখে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিট।
সিটি হল থেকে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলতে পারে অ্যান্টি হেট ক্রাইম ইউনিট। ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী পাঁচটি বিষয়ের উপর অনলাইন হেট ক্রাইম নজর রাখবে। তার হলো বর্ণ, ধর্ম, প্রতিবন্ধকতা, যৌনতা বিষয়ক ও লিঙ্গান্তর পরিচয়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগুলোতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিটকে ঘিরে জেগে উঠা হেট ক্রাইমের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ২০১৫/১৬ সালে পুলিশের কাছে এমন ৬২ হাজার ৫১৮ অভিযোগ জমা পড়ে। আগের বছরে ৫২ হাজার ৪৬৫ অভিযোগের তুলনায় যা ১৯ শতাংশ বেশি।