শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বিদেশ পালিয়েছেন থাইল্যাণ্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে চলা চালের ভর্তুকি নিয়ে দায়িত্বে অবহেলা সংক্রান্ত মামলার রায় প্রকাশ করার কথা ছিলো আদালতের। তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির হন নি তিনি।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। শুক্রবার ইংলাকের দল পুয়ে থাই পার্টির সূত্রের বরাত বিবিসি জানায়, চালে ভর্তুকি দেওয়ার নামে দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই তিনি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ইংলাকের আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন, তিনি অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। এরপর আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বিচারকরা আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ মামলায় রায় ঘোষণা স্থগিত করেন। আজই এ রায় ঘোষণার কথা ছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে,তিনি শুক্রবার রায় প্রকাশের কার্যক্রম শুরুর আগেই বিদেশ পালিয়ে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন সে সম্বন্ধে কিছু বলেননি ওই সূত্র। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে ওই সূত্র সিনাওয়াত্রার পরিবারের সঙ্গে জড়িত এবং সিনাওয়াত্রার নিজ দলের সদস্য।
তিনি বলেন, তিনি (সিনাওয়াত্রা) নিশ্চিতভাবেই পালিয়ে গেছেন। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন এমন ধারণা আগেই করা হয়েছিলো। তাই তিনি আদালতে উপস্থিত না হওয়ার পরপরই সীমান্তে কঠোর করা হয়েছে নজরদারি। এমনকি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী প্রাওয়িত ওংসুয়ান বলেছিলেন, সম্ভাবনা রয়েছে যে ইংলাক ইতিমধ্যেই পালিয়ে গেছেন।
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত সিনাওয়াত্রার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির হন নি। তবে তারা কোন প্রকার মেডিকেল দলিল দেখাতে পারেননি। পরিপ্রেক্ষিতে, থাইল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট তাদের এই অজুহাত আমলে নেয়নি। ইতিমধ্যেই আদালত সিনাওয়াত্রাকে কে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করেছে। তার ৯ লাখ ডলারের জামিন বাতিল করা হয়েছে।
আর রায় প্রকাশের তারিখ পিছিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। সিনাওয়াত্রা অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আনীত অভিযোগগুলোর ওপর ভিত্তি করে তিনি ১০ বছরের বেশি সময় কারাদ- পেতে পারেন। পাশাপাশি চিরতরে রাজনীতি থেকে বহিষ্কার হতে পারেন।
সিনাওয়াত্রা আদলতে হাজির হন নি এ খবর শোনার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-অচা বলেছিলেন, দেশের সবগুলো পথে কড়া নজর রাখা হবে, তার পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে। তিনি বলেন, আমি এই মাত্র শুনলাম সে আদালতে হাজির হয়নি। আমি সবগুলো বর্ডার চেকপয়েন্টে নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছি।
দেশটির অভিবাসন পুলিশ প্রধানও প্রাথমিকভাবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তার ধারণা সিনাওয়াত্রা এখনো দেশেই আছেন। কারণ তার কাছে এমন কোন তথ্য আসেনি যা সিনাওয়াত্রার পালিয়ে যাওয়া নির্দেশ করে। সিনাওয়াত্রার আইনজীবী নররাওয়িত লার্লেংকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, আমি জানি না।’
চালের ভর্তুকি কেলেংকারিটি সিনাওয়াত্রার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ। তিনি ২০১১ সালে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। আসন গ্রহণ করার কিছুদিন পরেই তিনি কৃষকদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত চালের জন্যে বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন দাম পরিশোধ করেন।
তবে এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানি খাত। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ৮০০ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে তাকে অভিশংসিত করা হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে তার জনপ্রিয়তা এখনো বজায় রয়েছে। তবে বিরোধীদলের ভাষ্যমতে এই চাল কেলেঙ্কারি অনেক ব্যায়সাধ্য ও দুর্নীতিতে ভরা ছিলো।