শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের সহিংসতার জন্য এবার আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের দায়ী করলেন অং সান সুচি।
তিনি বলেছেন, এসব ত্রাণকর্মী মিয়ানমারের সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা বিদ্রোহী না লিখে তাদেরকে টেরোরিস্ট (সন্ত্রাসী) লিখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সব মিডিয়াকে। সুচির এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো।
বলা হয়েছে, সুচিকে অবশ্যই দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কথা বলা বন্ধ করতে হবে। এটা না করলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বিরোধী আইন ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। সুচির এমন অবস্থানের কারণে মিয়ানমারে ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, অং সান সুচি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর। তার অফিস থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রাম যখন উগ্র সন্ত্রাসীরা ঘেরাও করে তখন তাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীরা এটা জানতে পেরেছে স্টেট কাউন্সেলরের অফিস। তারা এ বিষয়টি তদন্ত করবে। স্টেট কাউন্সেলরের অফিস থেকে একটি ছবিও পোস্ট করা হয়েছে।
তাতে দেখানো হয়েছে, জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক কর্মসূচিতে বিতরণ করা বিস্কুট। এসব বিস্কুট পাওয়া গেছে ৩০ শে জুলাই ‘সন্ত্রাসীরা যে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল’ সেখানে। গার্ডিয়ান লিখেছে, মিয়ানমার সরকার এমন এক সময়ে এ অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থার বিরুদ্ধে যখন মিয়ানমারে মুসলিম বিরোধী সেন্টিমেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
তবে সরকার জাতিসংঘের কর্মসূচির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা সামান্যই। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর অভিযানে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে অং সান সুচি। রাখাইনের বহু এলাকা ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি সীমিত করেছে। প্রকাশ্যে এসব ত্রাণকর্মী ও সাংবাদিকদের অবমাননা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাখাইনে অবস্থান করা জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যেসব স্টাফের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তাদেরকে মংডুতে অস্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানান নি। বুথিদাউন শহর থেকে স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলেছেন, রোববার জাতিসংঘ ফেসবুকে তাদের বিবৃতি পোস্ট করার পর স্পিডবোটে করে প্রায় ১০০ স্টাফকে সরিয়ে নিতে দেখেছেন তিনি।
ওদিকে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ফোরটিফাই রাইটসের নির্বাহী পরিচালক ম্যাথিউ স্মিথ বলেছেন, অং সান সুচি ত্রাণকর্মীদের বিরুদ্ধে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা গভীর দায়িত্বজ্ঞানহীন, বিপদজনক ও প্রচ- ভয়াবহ।
তিনি আরো বলেন, যখন পরিস্থিতি শান্ত করতে, মানকবাধিকারের পক্ষে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করা উচিত সুচির, ঠিক তখন তিনি রোহিঙ্গা ও ত্রাণকর্মী বিরোধী উত্তেজনায় উস্কানিমুলক কথাবার্তা বলছেন। এ মাসের শুরুর দিকে রাখাইনে ক্রমবর্ধমান বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতির বিষয়ে ত্রাণকর্মীদের সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তাতে রাখাইন সঙ্কট ক্রমশ সিভিল আনরেস্ট বা গণঅসন্তোষের দিকে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত করা হয়।
বলা হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনজিও) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হতে পারে। রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে অবস্থিত ত্রাণ বিষয়ক অফিসগুলো ভাঙচুর করা হয়েছিল ২০১৪ সালের দাঙ্গার সময়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে উস্কানি বাড়াতে গুজব, ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হতে পারে। এমন অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়া হতে পারে বিরোধপূর্ণ আবহ তৈরিতে ও উদ্বেগ সৃষ্টিতে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ত্রাণকর্মীদের বিরুদ্ধে সুচির অভিযোগ পুরোপুরি কা-জ্ঞানহীন।
ওদিকে দ্য গার্ডিয়অনের কাছে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এতে বলা হয়েছে, খাদ্য বিভাগের কোনো অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়। এ বিষয়ে (মিয়ানমার) কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জানতে চাওয়া হয়েছে উদ্ধার করা বিস্কুটের ব্যাচ নম্বর, যাতে এটা নির্ণয় করা যায় যে, ওই বিস্কুট কোথাকার এবং কোথায় বিতরণ করা হয়েছিল। এখনও এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে ডব্লিউএফপি। শুক্রবার নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি’র (এআরএসএ) হামলার পর রাখাইনে কমপক্ষে ১০৪ জন নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ১২ জন। গত বছরে সৃষ্ট একই রকম ঘটনায় সৃষ্ট রক্তাক্ত সংঘাতের চেয়েও এবার আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে পালাচ্ছে বাংলাদেশে।
২০১৫ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতায় আসেন অং সান সুচি। তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে রোহিঙ্গা বেসামরিক সাধারণ মানুষের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করতে চাইলে জাতিসংঘের তদন্তকারীদেরকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় তার প্রশাসন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফেব্রুয়ারিতে একটি রিপোর্ট দেয়।
তাতে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। গণধর্ষণ করেছে রোহিঙ্গা নারীদের। এটা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধের মতোই বিবেচনা করা যায়। এটা জাতিগত নির্মূল অভিযানের মতো। এর পর থেকেই জাতিসংঘের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে মিয়ানমার। তারা বলছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘ।
Normal
0
false
false
false
EN-GB
X-NONE
X-NONE
শীর্ষবিন্দুআন্তর্জাতিকনিউজডেস্ক:
/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:”Table Normal”;
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-priority:99;
mso-style-parent:””;
mso-padding-alt:0cm 5.4pt 0cm 5.4pt;
mso-para-margin:0cm;
mso-para-margin-bottom:.0001pt;
mso-pagination:none;
punctuation-wrap:simple;
text-autospace:none;
font-size:11.0pt;
font-family:”Calibri”,”sans-serif”;
mso-font-kerning:1.5pt;}