মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১১

ইলিশে চকচকে চাঁদপুরের আড়ত তবুও কমছে না দাম

ইলিশে চকচকে চাঁদপুরের আড়ত তবুও কমছে না দাম

ইব্রাহিম রনি: মৌসুমের শুরুতে জেলের জালে ইলিশের দেখা না মেলেনি। জেলেদের সেই হাহাকার কাটতে শুরু করেছে। ইলিশের আড়ত চকচকে হয়ে উঠতে শুরু করেছে ইলিশের রঙে। দেশে ইলিশের সবচেয়ে বড় হাট চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তগুলোর চিত্রও একই। সাতশ থেকে আটশ মণ ইলিশ ইলিশের আমদানি হচ্ছে প্রতিদিন। আমদানি বাড়ছেও।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আসা এসব ইলিশের বেশিরভাগই গভীর সমুদ্রের। চাঁদপুর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের পদ্মা-মেঘনা তথা স্বাদু পানিতে ধরা পড়া ইলিশের সরবরাহ এখনও পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া, আমদানি বাড়লেও ইলিশের দাম এখনও কমেনি।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সবেবরাত সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন চাঁদপুরের ঘাটে আসা ইলিশগুলো গভীর সমুদ্রের। এগুলো কুয়াকাটাসহ অন্যান্য সমুদ্র অঞ্চল থেকে আসছে। পদ্মা-মেঘনার স্বাদু পানির ইলিশ এখনও এ অঞ্চলের জেলেদের জালে তেমন ধরা দিচ্ছে না।’ চাঁদপুর আড়তে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) আড়তে প্রায় আটশ মণ ইলিশ এসেছে বলে জানান তিনি।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান বলেন, গত বছরের ইলিশের টার্গেট ছিল ২০ হাজার নয়শ ৩৫ মেট্রিক টন। পেয়েছিলাম ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর এখনও ইলিশ ভাটিতেই রয়ে গেছে। আস্তে আস্তে উজানের দিকে ইলিশ পাওয়া যাবে। গত বছরের চেয়েও এ বছর ইলিশ বেশি ধরা পড়বে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাগর ও নিম্নাঞ্চলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এটা আশাব্যঞ্জক। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই চাঁদপুর অঞ্চলেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।’ ইলিশের জিআই স্বীকৃতিকে বড় একটি অর্জন উল্লেখ করেন তিনি।

চাঁদপুরের বাবুরহাট থেকে ইলিশ কিনতে আসা ফারুক আহমেদ বলেন, ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ৫ কেজি ইলিশ মাছ কিনেছি ৩ হাজার টাকা দিয়ে। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৬০০ টাকা।’ ইলিশের আমদানি বাড়লেও দাম এখনও কমেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চাঁদপুর মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, চাঁদপুর নদী অঞ্চলের মাছ কম। জেলেরা বলছেন, এখনও চাঁদপুর অঞ্চলে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। মাছঘাটের পাশে ডাকাতিয়া নদীতে নোঙর করা রয়েছে সাগর অঞ্চল থেকে ইলিশ নিয়ে আসা বেশ কয়েকটি ফিশিং বোট।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তদার ইমান গাজী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এখানে সর্বোচ্চ দুই কেজি ওজন থেকে শুরু করে সব সাইজের মাছই আসছে। গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) থেকেই মাছের আমদানি বেড়েছে। বরগুনার পাথরঘাটা, ভোলার চরফ্যাশন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, নোয়াখালীর হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে এসব মাছ আসছে।’ এর আগে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন গড়ে একশ মণ ইলিশ আসত বলে জানান তিনি।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের আড়তদার হাজী খায়ের গাজী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্থানীয় নদীতে ধরা ইলিশের আমদানি কম। নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে মাছ আসছে। এসব অঞ্চলের মাছের দাম একটু বেশি। তিনি জানান, ২ কেজি ওজন আকারের প্রতি কেজি ইলিশ আড়াই হাজার টাকা এবং প্রতি মণ (৪০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকা দরে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১৭৫০ টাকা কেজি আর প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০ হাজার টাকায়। অন্যদিকে, এক কেজি আকারের ইলিশের মণ ৫০ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ১২৫০ টাকা। এর চেয়ে ছোট ৮শ থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯শ টাকা কেজি এবং প্রতি মণ ৩৬ হাজার টাকা, ৫শ থেকে ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২৬ হাজার টাকা মণ আর ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই মৎস্য ব্যবসায়ী আরও জানান, সমুদ্র অঞ্চল এবং ভোলা-বরিশাল অঞ্চল তথা ফিশিং মাছের দাম কিছুটা কম। ওই অঞ্চলের ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৮০০ টাকা এবং প্রতি মণ ৩২ হাজার টাকা। আর ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ২২ হাজার টাকা এবং প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা দরে। এছাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকা এবং কেজি ৩০০ টাকা দরে।

এই বাজারে আড়তদারদের কাছ থেকে মাছ কিনে এখানেই বিক্রি করেন মিজানুর রহমান। তিনি জানান, চাঁদপুর অঞ্চলের (লোকাল) দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১৮০০ টাকা এবং প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭২ হাজার টাকা দরে। তিনি নিজে এই মাছ কিনেছেন প্রতি মণ কেনেন ৬০ হাজার টাকা দরে। অন্যদিকে, ৭৫০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ ৭৫০ টাকা দরে কিনে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলেও জানালেন এই ব্যবসায়ী।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024