শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ঐতিহাসিক মিনায় ঢল নেমেছে হজযাত্রীদের। গত রাত থেকেই সেখানে সমবেত হতে শুরু করেছেন তারা। এর মধ্যদিয়ে আজ শুরু হচ্ছে পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
আজকের রাত এই তাঁবুর শহর খ্যাত মিনায় অবস্থান করবেন হজযাত্রীরা। এখানে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা ছুটে যাবেন আরাফাতের ময়দানে। মিনা থেকে আরাফাতের ময়দান ১০ কিলোমিটার বা ৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে। মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই কেউ পায়ে হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে করে, যে যেভাবে পারেন সেভাবেই আগামীকাল ছুটে যাবেন আরাফাতের ময়দানে। দু’টুকরো সাদা কাপড়ে ঢাকা হজযাত্রীতে আরাফাতের ময়দান ও এর আশপাশ সফেদ রূপ ধারণ করবে। সেখানে তারা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই রওনা দেবেন মুজদালিফার দিকে। মুজাদালিফায় গিয়ে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। সেখানেই রাত্রিযাপন করবেন খোলা আকাশের নিচে। গত রাতে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সারা বিশ্ব থেকে সমবেত হওয়া লাখো হজযাত্রী।
এর আগে তারা সমবেত হয়েছিলেন পবিত্র মক্কা নগরীতে। আজ মিনায় তাঁবুতে অবস্থানকালে ধর্মীয় বক্তাদের মূল্যবান বক্তব্য শুনবেন নারী-পুরুষ হজযাত্রী পাশাপাশি বসে। হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষ, তারা ডানে বামে তাকাননি। এক আল্লাহ্র ধ্যান করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন পবিত্র নগরী মিনার দিকে। এ এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। গতকাল সূর্য ডোবার পর থেকে এসব হজযাত্রী পবিত্র মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। তাদের মুখে আল্লাহ্র বাণী। দমে দমে আল্লাহ্কে ডাকছেন। হাতে পানির বোতল। কব্জিতে বাঁধা নাম, পরিচয়বাহী ব্রেসলেট। পিঠে ব্যাগ।
পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম পর্ব সম্পন্ন করতে তারা ছোটেন সবাই। কোনো বর্ণ, গোত্র, সাদা, কালোর ভেদাভেদ নেই। সবাই সেখানে এক আল্লাহ্র অতিথি। অনলাইন সৌদি গেজেট লিখেছে, আজ সারাদিন মক্কা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর মিনায় আগমন করবেন হজযাত্রীরা। এ দিনটি ইয়াওম-আল-তারবিয়া নামে পরিচিত।
এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৮ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ হজ করতে সৌদি আরবে সমবেত হয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে হজ পালন নিশ্চিত করার জন্য সৌদি আরবের সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো হজের আনুষ্ঠানিকতা সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মক্কাতুল মুকার্রমার উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান দ্য সুপ্রিম অথরিটি ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব মক্কা (এসএডিএম) জানিয়েছে, নিরাপদ হজ অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় ২২ টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বছর থেকেই হজযাত্রীরা তার সুফল পাবেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- মিনায় আল-ওয়াদি হাসপাতালের পশ্চিমে একটি পায়ে হাঁটা সেতু, মক্কার আল-আজিজিয়া থেকে মিনা’র জামারা পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার রাস্তায় ছাউনি স্থাপন, বিপুল সংখ্যক নতুন শৌচাগার নির্মাণ, মুয়াইসেম-এ ছয়টি নতুন মাংস পেষক স্থাপন, বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য জামারা অঞ্চলে পানি ছিটানোর ব্যবস্থাকরণ ও ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত রাস্তায় ছাউনি স্থাপন।
এছাড়া মুজদালিফায় তুর্কি হজযাত্রীদের বহনকারী বাসের রাস্তা থেকে পদচারী রাস্তা আলাদা করার জন্য বেশকিছু ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে ইরানি ও অনারব আফ্রিকানদের চলাচলের রাস্তা একীভূত করা হয়েছে। আরাফায় ব্যারিকেড দিয়ে ও সিমেন্টের প্রাচীর নির্মাণ করে পায়ে চলাচলের রাস্তাকে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নামিরা মসজিদের ভিতরে ও বাইরের অঞ্চল টেলিভিশন ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে হাজীদেরকে জাবল-আল-রাহমা পাহাড়ে আরোহণ করতে হয়। হাজীদের সুবিধার জন্য সেখানে সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে এ পর্বতে আরোহণের রাস্তার সাথেই ইরানি হাজীদের তাঁবু স্থাপনের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা ছিল।
এবার তা পৃথক করা হয়েছে। এ বছর মদিনার অধিবাসী ৮৫ হাজারেরও বেশি মানুষ হজ পালন করবেন। রোববার ২২০০ টি বাসে চড়ে মদিনার হাজিরা মক্কায় আগমন করেছেন। এছাড়া, কাতারের ১৩৪০ জন হাজী স্থলপথে সালওয়া সীমান্ত দিয়ে মক্কায় পৌঁছেছেন। তারা সৌদি আরবের বাদশা সালমানের ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে হজ পালন করছেন।