শীর্ষবিন্দু নিউজ: ঈদ মোবারক। আজ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। প্রতিবাবেরর মতো সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ইউরোপ-আমেরিকাসহ ব্রিটেনেও পালিত হচ্ছে এই ঈদ উৎসব।
লন্ডনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী অধ্যূষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের মাইল্যান্ড স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায়। এর আগে লন্ডনের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ ইস্ট লন্ডন মসজিদে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ১১টা পর্যন্ত চলে ৫টা ঈদ জামাত। এছাড়াও টাওয়ার হ্যামলেটসে অন্যান্য মসজিদেও অনুষ্ঠিত হয় ঈদের ৪টা থেকে ৫টা জামাত।
মুসলমানদের বড় দুটি উৎসবের একটি হলো আজকের এই কোরবানীর ঈদ। কোরবানী বা ত্যাগের ইতিহাস সকলের জানা। হযরত ইসমাইল (আঃ) নিজ পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে কোরবানী করতে গিয়ে যে নজির সৃষ্টি করেছিলেন, এর পরবর্তীতে মহান রাব্বুল আলামিন পশু কোরবানীর রেওয়াজ সৃষ্টি করেন।
আর সেজন্য বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান ঈদ-উল-আযহার এই দিনে পশু কোরবানী করেন। গরু-খাসি, উট, দুম্বা মূলত এসব পশু কোরবানী দেওয়া হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে যেহেতু উট ও দুম্বা পাওয়া প্রায় দুষ্কর তাই গরু ও খাসি কোরবানী করা হয়। হান সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে পশু কোরবানী দেওয়া হয় ব্রিটেনেও।
তবে এটা দেশের মতো নিজে কোরবানী দেয়া যায় না ব্রিটেনে। কোরবানী দিতে হলে নির্ধারিত গ্রোসারী দোকানে গিয়ে অর্ডার দিতে হয়। এরপর সম্পূর্ণ দোকানীর তত্ত্বাবধানে এই কোরবানী জবাই এবং মাংস কাটা হয়। পরবর্তীতে দোকানী হোম ডেলিভারী দেন ক্রেতাদের বাসা-বাড়িতে।
আর এভাবেই এক সময় শেষ হবে ঈদের আমেজ। তবে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোরবানীর ঈদ আড়াই দিন পালন করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আজ, কাল এবং পরশু দুপুর পর্যন্ত কোরবানী করা যায়। যদিও সবাই ঈদের প্রথম দিনই কোরবানী করেন। কারণ প্রথম দিনের আনন্দ অন্য দিন পাওয়া যায় না।
দিনটি উপলক্ষে পশু কোরবানিই অবশ্য একমাত্র করণীয় নয়। তার আগে পবিত্র হজ্ব¦কে মুসলমানদের জন্য ফরজ বা অবশ্যপালনীয় করা হয়েছে। হজ্ব পালিত হয় হিজরি সালের শেষ মাস জিলহজ্ব মাসে। এ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা গিয়ে পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমায় সমবেত হন। ৮ জিলহজ্ব থেকে তিন দিন ধরে তারা মিনা, মুযদালিফা ও আরাফাতের ময়দানসহ নির্ধারিত স্থানগুলোতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
বলতে থাকেন, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। তারপর আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবায় গিয়ে চারদিকে সাতবার ঘুরে তাওয়াফ করতে হয়। ‘সাঈ’ করার জন্য যেতে হয় সাফা ও মারওয়া নামের দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে, যেখানে শিশু ইসমাইল (আ.)-কে পানি খাওয়ানোর জন্য মা হাজেরা ছুটোছুটি করেছিলেন এবং যেখানে আল্লাহর কুদরতে তৈরি হয়েছিল জমজম কূপ। সাতবার ‘সাঈ’ করার তথা সাফা ও মারওয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করার পাশাপাশি ‘আবে জমজম’ বা জমজমের পানিও পান করেন হজ্বকারীরা।
সর্বশেষে আসে কোরবানির পালা, উদযাপিত হয় ঈদুল আযহা। পবিত্র এ দিনটিতে পশু কোরবানি দেয়ার আগে দু’ রাকাত ওয়াজিব সালাত তথা নামায আদায় করতে হয়। এবছর হজ্ব পালিত হয়েছে গতকাল, বৃহস্পতিবার। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আযহা।
বলা দরকার, ঈদুল আযহা কেবলই পশু কোরবানি দেয়ার এবং উৎসব করার দিন নয়। দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহতা’লার প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আনুগত্য তৈরি করা এবং স্বার্থচিন্তার উচ্ছেদ করে আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহতা’লার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা।
সুতরাং কেবলই পশু কোরবানি দেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরিবর্তে মুসলমানদের উচিত নিজেকে আল্লাহতা’লার কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করার এবং তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। একই কারণে পশু কেনা উচিত সৎপথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। পশুর গোশ্ত যত বেশি সম্ভব আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে।
এভাবে সব মিলিয়েই কোরবানি তথা আত্মত্যাগ করার শিক্ষা দেয় পবিত্র ঈদুল আযহা। আমরা আশা করতে চাই, বিশ্বের মুসলমানরা দিনটির মূল শিক্ষাগুলো অনুধাবন করবেন এবং চেষ্টা করবেন যাতে প্রতিবেশি ও স্বজনসহ অন্যরাও উৎসবে শরিক হতে পারেন।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে শীর্ষবিন্দু এর সকল পাঠক, লেখক, সংবাদদাতা, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীসহ সবার প্রতি আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।