বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৭

মুসলিম পরিবার থেকে খ্রিস্টান শিশুকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিচারপতি স্বপ্নারা

মুসলিম পরিবার থেকে খ্রিস্টান শিশুকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিচারপতি স্বপ্নারা

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে তুমুল বিতর্কে থাকা মুসলিম পরিবারের কাছে ফস্টার কেয়ার বা ভরণপোষণের আওতায় খ্রিস্টান শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব দেয়া টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ভ্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে।

গত মঙ্গলবার এক ব্রিটিশ মুসলিম পরিবারের ভরণপোষণে থাকা পাঁচ বছর বয়সী ঐ খ্রিস্টান শিশুকে তার দাদির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন আদালত। আর বিতর্কিত এই মামলার রায় দিয়ে আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বিচারপতি স্বপ্নারা খাতুন।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিচারপতি স্বপ্নারা খাতুন বলেন, ওই মেয়েটির সর্বোচ্চ আগ্রহের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেয়েটি চেয়েছে পরিবারের এমন কোনও সদস্যের সঙ্গে থাকতে যে তাকে তার জাতিতাত্ত্বিক পরিচয়, সংস্কৃতি ও ধর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিরাপদ রাখতে পারবে, তার মঙ্গলের কথা ভাববে এবং তার চাহিদা পূরণ করবে।

বিচারপতি স্বপ্নারা খাতুন তার রায়ে বলেন, খ্রিস্টান পরিবারের লালন পালনের আওতা থেকে ওই মুসলিম শিশুকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের সংশ্লিষ্টতা নেই। দাদি যথাযথভাবে ওই শিশুকে লালন-পালন করতে পারবেন বলে আদালতে প্রমাণ হাজির করার সাপেক্ষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিচারপতি সাপনারা ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং শিশু বয়সেই তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান। তার বাবা প্রয়াত মিম্বর আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত হন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ বিচারপতিকে অনেক ইস্যুতে স্পষ্টভাষী অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ২০০৭ সালের জোরপূর্বক বিয়ে সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এ আইনের আওতায় জোরপূর্বক বিয়ে ঠেকিয়ে প্রটেকশন অর্ডার জারি করতে পারে আদালত।

ওই শিশুটিকে মুসলিম পরিবারের হেফাজতে দিয়েছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এদিকে হ্যামলেটস কাউন্সিল দাবি করেছে, মামলাটিকে মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের দাবি, কোনও শিশুকে কারও লালন-পালনের আওতায় দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই শিশুর আগ্রহকে বিবেচনা করা হয়।

সম্প্রতি ঐ খ্রিস্টান শিশুকে জোর করে এক মুসলিম পরিবারের ভরণপোষণের আওতায় রাখা হয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়, পূর্ব লন্ডনে ইংরেজি ভাষাভাষী এক শিশুকে আরবি ভাষাভাষি এক পরিবারের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তি সম্বলিত একটি নেকলেসও তার গলা থেকে খুলে ফেলা হয়েছে। খবরটি প্রথম প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস।

ওই মামলাসংক্রান্ত কিছু নথির ওপর ভিত্তি করে তারা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল। আর ওই মামলাতেই রায় দিয়েছেন স্বপনারা। শিশুটির জাতিগত পরিচয়, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রাখতে তাকে তার দাদির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত বলে রায় দিয়েছেন।

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন-এর সহকারী মহাসচিব মিকদাদ ভেরসি বলেন: ‘গোটা ঘটনায় স্পষ্টভাবে বিদেশিদের (বিশেষ করে মুসলিম বিদেশি) সুনামহানি হয়েছে। এটি ভয়ঙ্কর। খ্রিস্টানদের ভরণপোষণের আওতায় থাকা প্রায় ১০০ মুসলিম শিশুর কী হবে।

ইংল্যান্ডের শিশুবিষয়ক কমিশনার অ্যানি লংফিল্ড বলেন, আমি এ খবরগুলো সম্পর্কে জেনেছি। যখন কোনও শিশুর লালন-পালনের ভার কাউকে দেওয়া হয় তখন ওই শিশুর ধর্মীয়, জাতিগত এবং সংস্কৃতি সংক্রান্ত পূর্ব ইতিহাস বিবেচনায় নিতে হয়।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেন, যখন আমরা কোনও মামলার এমন কোনও বিস্তারিত জানতে পারি না, যা শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করতে পারে তখন তা নিয়ে রিপোর্ট করলে সেখানে অসম্পূর্ণ তথ্য থাকে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সত্যিকার অর্থে এ শিশুটিকে যারা লালন পালন করছিল তারা ইংরেজি ভাষাভাষি পরিবার এবং তাদের মিশ্র জাতিতাত্ত্বিক পরিচয় রয়েছে। আমরা আরও বিস্তারিত দিতে পারতাম কিন্তু আইনগতভাবে এমনটা করার সুযোগ আমাদের নেই। শিশুটিকে যেন পরিবারের কোনও সদস্য দেখাশোনা করে সেটাই আমরা সবসময় করতে চেয়েছি এবং সে চেষ্টা চালিয়ে যাব।

চলতি সপ্তাহে লন্ডনের একটি পারিবারিক আদালতে বলা হয়, পরিবারের ইচ্ছায় শিশুটিকে সাময়িকভাবে তার দাদির হেফাজতে রাখার বিষয়টিকে কয়েক মাস ধরে বিবেচনা করা হচ্ছিল। সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মুসলিম সংগঠনগুলোও। তাদের অভিযোগ, মুসলিম সম্প্রদায়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই শিশুকে কী কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে তার ভরণপোষণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের শিশু আইন ১৯৮৯ তে বলা আছে, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কোনও শিশুকে ফস্টার কেয়ার বা ভরণপোষণের আওতায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ওই শিশুর ধর্মীয় বিশ্বাস, জাতিতাত্ত্বিক উৎস এবং সাংস্কৃতিক ও ভাষা সংক্রান্ত পূর্ব ইতিহাস পরীক্ষা করে নিতে হয়।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024