গেইমস ডেস্ক: এইচবিও চ্যানেলে গত ২৭ আগস্ট শেষ হওয়া গেম অব থ্রোনস সিরিজের সপ্তম মৌসুমের দর্শক ছিল অভূতপূর্ব। কিন্তু এই সিরিজ টিভি চ্যানেলের চেয়ে অবৈধভাবে দেখেছে বেশি দর্শক! হতভম্ব হওয়ার মতো ব্যাপার হলো, সাতটি পর্ব অবৈধভাবে ডাউনলোড হয়েছে ১০০ কোটি বারেরও বেশি! কিন্তু এইচবিও’র ঘরে আসেনি এক কানাকড়িও!
ভ্যারাইটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সপ্তম মৌসুমের প্রথম পর্ব টিভিতে দেখা হয়েছে রেকর্ডসংখ্যক ১ কোটি ৬১ লাখ বার। এর সুবাদে খবরের শিরোনামে চলে আসে সিরিজটি। কিন্তু প্রিমিয়ারটি অবৈধভাবে দেখা হয়েছে ১৮ কোটি ৭৪ লাখ বারেরও বেশি। যা টিভি দর্শকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি!
এন্টারটেইনমেন্ট উইকলির দাবি, সিরিজের ফাইনাল ছিল এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি দেখা পর্ব। জানা গেছে, ১ কোটি ৬৫ লাখ বার এটি দেখেছে দর্শকরা। এর সুবাদে ভেঙেছে এইচবিও’র রেটিং রেকর্ডস। সপ্তম পর্বটি অবৈধভাবে দেখা হয়েছে ১৪ কোটি ৩৩ লাখ বারেরও বেশি।
পাইরেসিবিরোধী বিশ্লেষক সংস্থা মুসো (এমইউএসও) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্লকবাস্টার টেলিভিশন সিরিজটির সপ্তম মৌসুমের প্রিমিয়ারের প্রথম ৭২ ঘণ্টায় তা বেআইনিভাবে ডাউনলোড হয়েছে ৯ কোটি বার। আর শেষ পর্বটির অবৈধ ডাউনলোডের সংখ্যা ৭২ ঘণ্টায় ১২ কোটি বার।
ভ্যারাইটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে মোট ১০০ কোটি ৩ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে এবারের মৌসুম। এর মধ্যে ৮৪.৬৬ শতাংশ প্রচারের সময়, ৯.১২ শতাংশ টরেন্টস এবং ডাউনলোডের পরিমাণ ৫.৫৯ শতাংশ।
ভ্যারাইটিকে মুসোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ডি শ্যাটার্লি বলেছেন, “এই সময়ের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিনোদন হয়ে উঠেছে ‘গেম অব থ্রোনস’। পাইরেসি নেটওয়ার্কগুলোতে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ পুরোপুরি বিস্ময়কর। সবাই জানে এবারের মৌসুমের একাধিক পর্ব প্রচারের আগেই অনলাইনে ফাঁস করে দিয়েছে হ্যাকাররা। মূলত এ কারণে টরেন্ট ডাউনলোডের চেয়েও বেশি পাইরেসি হয়েছে পর্বগুলো। সম্ভবত সিংহাসনের খেলায় কী ঘটতে চলেছে তা টিভিতে দেখার আগেই জেনে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কেউ। এ কারণে ষষ্ঠ পর্বটি অবৈধ ডাউনলোডের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৮ কোটি ৪৯ লাখের ঘর।’
২০১০ সালে ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা জানায়, বৈশ্বিক পাইরেসির কারণে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বছরে ২৫০ কোটি ডলার হাতছাড়া হয়। এ কারণে প্রতি বছর ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন বলে সংস্থাটির দাবি।
মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ২০০৬ সালে এক সমীক্ষায় দেখেছে, চলচ্চিত্র পাইরেসির কারণে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।
পাইরেটেড ছবি কিংবা সিরিজ দেখার হার ক্রমে বেড়েই চলেছে। বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে আমেরিকান সব টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র মিলিয়ে ৭৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের লোকসান হয়েছে।
২০১৫ সালে প্রযোজকদের জোট স্ক্রিন ফিউচার্সের এক জরিপে দেখা যায়, যারা অবৈধভাবে ছবি বা অনুষ্ঠান দেখেন বা ডাউনলোড করেন তাদের মাথায় ধরা পড়ার ভয় থাকে না, বরং বিনা মূল্যে পাওয়াটাই এখানে আসল কথা। জরিমানা কিংবা আইনি ঝামেলায় পড়লে এ সংখ্যা কমতে পারে বলে ধারণা স্ক্রিন ফিউচার্সের।
‘গেম অব থ্রোনস’ কোন পর্ব কতবার ডাউনলোড
পর্ব-১: ১৮ কোটি ৭৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৭৫
পর্ব-২: ১২ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ২০৯
পর্ব-৩: ১১ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১
পর্ব-৪: ১২ কোটি ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৮
পর্ব-৫: ১৫ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬০
পর্ব-৬: ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৭৯
পর্ব-৭: ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪