শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৪

শেয়ারের দাম চড়ছেই, কিন্তু কেন?

শেয়ারের দাম চড়ছেই, কিন্তু কেন?

ফারহান ফেরদৌস: পুঁজিবাজারের মন্দা অবস্থার মধ্যে একটি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত করেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। খোদ কোম্পানিও জানে না- কেন বাড়ছে তাদের শেয়ারের দাম।

গত জুনে ওষুধ খাতের ‘জেএমআই সিরিঞ্জ’ নামে এই কোম্পনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়, তখন প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ৩৮ টাকা। টানা বৃদ্ধির মধ্যে সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে এর দাম দাঁড়ায় ৩০০ টাকা। সর্বশেষ বুধবারই এর দাম কমেছে, বর্তমান দাম ২৮২ টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারসাজি করে শেয়ারটির দাম বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানির সচিবও জানেন না, প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণ। জেএমআই সিরিঞ্জের সচিব তারেক হোসেন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কোম্পানির স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রমের বাইরে নতুন কোন খবর নেই। এভাবে হঠাৎ করে দাম বাড়ার কোন কারণও নেই ।”

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের সিইও ইয়াওয়ার সাঈদ এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারসাজির কারণেই জেএমআই সিরিঞ্জের দাম বাড়ছে। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তার মৌল ভিত্তির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “জেএমআই সিরিঞ্জ’র শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৭০ টাকা হতে পারে। কোন অবস্থাতেই এর বেশি হতে পারে না। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “যদি কোন কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় ২ টাকা হয় তাহলে তার রেসিডুয়াল ভ্যালু ধরা হয় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ কম। এ ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কম ধরে হয় ১ টাকা ৫০ পয়সা । রেসিডুয়াল ভ্যালুকে বর্তমান বন্ডের সুদের হার ১০ শতাংশ দিয়ে ভাগ দিলে পাওয়া যায় ১৫ টাকা। এর সাথে শেয়ার প্রতি সম্পদ ৪৪ টাকা যোগ করলে হয় ৬০ টাকা।”

এ হিসাবে জেএমআই সিরিঞ্জ’র শেয়ারের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা হতে পারে বলে জানান মিজানুর রহমান। রেসিডুয়াল ভ্যালু হচ্ছে কর পরবর্তী ব্যবহারযোগ্য বা প্রাপ্য নগদ টাকা। বন্ডের সুদের হার হচ্ছে বাজারে বিক্রি হওয়া বন্ডের সুদের হার। ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, জেএমআই সিরিঞ্জ এ বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ৯৮ পয়সা বা এক টাকা। সে হিসাবে এ বছর শেয়ার প্রতি মুনাফা হয় ২ টাকার মতো। গত বছরের নিরীক্ষা অনুযায়ী শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ৪৪ টাকা ৬১ পয়সা ।

এ বিষয়ে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশে একটি দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানির শেয়ার বিশ থেকে চল্লিশ পিইতে লেনদেন হয়। সে অনুযায়ী জেএমআই সিরিঞ্জকে যদি দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানি ধরা হয় তাহলে এর দাম হওয়ার কথা ৪০ থেকে ৮০ টাকা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, শেয়ার প্রতি মুনাফা ২ টাকাকে ৪০ পিই দিয়ে গুণ দিলে এ মূল্য পাওয়া যায়। কোম্পানিটির শেয়ারের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে তদন্ত করে কারণ বের করলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। জেএমআই সিরিঞ্জ’র দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি কিছু সমস্যা খুঁজে পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে ব্যাবস্থা নিবে। অন্যদিকে দীর্ঘ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দুষছেন ইয়াওয়ার সাঈদ। তার মতে, বিএসইসি সময়মতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলেই এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

অধ্যাপক মিজানুর রহমানও বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। শেয়ারের দাম ‘সিরিয়াল ট্রেডিং’-এর মাধ্যমে বাড়ানো হলেও কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। আমেরিকায় এভাবে দাম বাড়ানো হলে ২৪ বছর জেল হয়, অথচ বাংলাদেশে কিছুই হয় না।

সৌজন্যে: বিডি নিউজ




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024