বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৩

সুচি নন তবে একজনই পারেন রোহিঙ্গা নিধন থামাতে

সুচি নন তবে একজনই পারেন রোহিঙ্গা নিধন থামাতে

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখলে, আপনি অং সান সুচির কর্মকান্ডে বিস্মিত বা স্তম্ভিত হতে পারেন। রাখাইন অঙ্গরাজ্যে সহিংসতার প্রেক্ষিতে তার যেই প্রতিক্রিয়া, সেটি বেশ হতাশাজনক। সেখানে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই কথা তার অস্বীকার করা উচিৎ নয়। রোহিঙ্গাদের পক্ষে তার সরব হওয়া উচিৎ। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নন যে কেন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তিনি এমন আচরণ করছেন।

এ মুহূর্তে আরাকানে কী চলছে, সেদিকে একটু মনোনিবেশ করা যাক। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের সর্বাধিনায়ক মিন অং হ্লাইং-এর নেতৃত্বে জঙ্গি নিধনের নামে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বড় আকারে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। ওই অভিযান শুরুর পর প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বিদেশে বসবাসরত ও মায়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সূত্রগুলো বলছে, লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সম্ভবত ৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘণ সংঘটিত হয়েছে মিয়ানমারে। হত্যা, শিরচ্ছেদ, পুড়িয়ে হত্যা; এমনকি শিশুদেরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে টার্গেট করেছে সামরিক বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র মিলিশিয়ারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার জেইদ রা’দ আল হোসেন এই সামরিক অভিযানকে জাতিগত নিধনের প্রকৃত উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

কিন্তু দুনিয়ার নজর যখন সুচির দিকে, তখন এই নৃশংস অপরাধের জন্য দায়ী আসল ব্যক্তিটির নাম সরকারী বিবৃতি বা মিডিয়ার নিবন্ধে উঠে আসছে না। মিন অং হ্লাইং-ই মূলত সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন। সুচির নিন্দাই তিনি দেখতে চান। তিনি জানেন, সুচির ওপর যত নজর আসবে, ততই তিনি নিজে নজর এড়াতে পারবেন। ফলে রোহিঙ্গা নির্মূলাভিযান তিনি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারবেন। এবং হচ্ছেও তা-ই।

সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের সংবিধানের খসড়া করেছে। এই সংবিধান অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ওপর সুচির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সামরিক বাহিনী দেশটিতে স্বাধীন। শুধু তা-ই নয়। দেশটির পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, কারাগার ও সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন।

এছাড়া সেনাবাহিনীর জন্য পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। যেহেতু সংবিধান সংশোধনের জন্য ৭৫ শতাংশ এমপির সমর্থন প্রয়োজন, সেই হিসাবে এক ধরণের ভেটো ক্ষমতাই ভোগ করছে সেনাবাহিনী। বস্তুত, মিয়ানমারে মিন অং হ্লাইং দ্বিতীয় এক সরকার চালান। এই সরকার হলো সশস্ত্র সরকার।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন যতদূর গড়িয়েছে, সেই হিসেবে এতক্ষণে মিন অং হ্লাইং-এর নাম সবার জানার কথা। তাকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতাধীনও করা উচিৎ। তার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর গায়ে বিশ্বের অন্যতম নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘণকারীর তকমা লেগে আছে। সাম্প্রতিক এই সামরিক অভিযানের আগেও, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে জাতিসংঘের তদন্তাধীন ছিল। দেশটিতে সংস্কার শুরু হওয়ার পূর্বে মিন অং হ্লাইং-এর সেনাবাহিনী ঘরোয়া বিভিন্ন সংঘাতে যুক্ত ছিল। কাচিন ও শান রাজ্যে তার সেনাবাহিনী প্রচুর বেসামরিক মানুষ মেরেছে।

জাতিগত নিধনের জন্য মিন অং হ্লাইং দায়ী। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতিসংঘ তদন্ত চালাচ্ছে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে প্রধান বাধা তিনিই। কিন্তু এর পরেও, তাকে কোনো ধরণের আন্তর্জাতিক চাপ সহ্য করতে হচ্ছে না।

গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোর বেশিরভাগই প্রত্যাহার করেন। বৃটিশ সরকার দেশটির করদাতাদের অর্থে এই সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়। এ বছরের শুরুর দিকে জার্মান ও অস্ট্রিয়ার সরকার মিন অং হ্লাইংকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে। তার সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আলোচনা করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এছাড়া সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী বিভিন্ন কারখানায়ও তিনি সফর করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এমনকি ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সামরিক বাহিনী প্রধানদের মর্যাদাবান এক বার্ষিক সম্মেলনে তাকে আমন্ত্রণ জানায়।

মিন অং হ্লাইং এ বছর ভারত ও জাপান সফর করেছেন। সেখানকার প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের সঙ্গেও তিনি সাক্ষাত করেন। এমনকি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন শুরু করার পরও, ঘনিষ্ঠতর সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর প্রধান।

নিষ্ঠুর মানবাধিকার রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও মিন অং হ্লাইংকে কার্যত সাদরেই গ্রহণ করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূলাভিযান চালানোর আগে যেই হিসাব কষেছেন মিন অং হ্লাইং, তার পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই লজ্জাজনক আচরণও নিশ্চয়ই ভুমিকা রেখেছে। এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, তার এই হিসাব ঠিকই ছিল।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে হবে। যেকোনো কিছু করে পার পেয়ে যাওয়ার যে আত্মবিশ্বাস তার মধ্যে, সেটি থামানোর সময় এসেছে। মিন অং হ্লাইং-এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেষ্ট হতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। লাল গালিচা সংবর্ধনা নয়, মিন অং হ্লাইং-এর মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

জাতিসংঘের বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বড় দেশগুলোর উচিৎ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক অবরোধ আরোপ করা। যেসব দেশ ইতিমধ্যেই এ ধরণের অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, তারা এই অবরোধ আরও বিস্তৃত করতে পারে। সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদ চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেরও দ্বারস্থও হতে পারে।

মিন অং হ্লাইংকে চাপ দেওয়ার বহু বিকল্প পথ রয়েছে। তাকে চাপ দেওয়ার মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান জাতিগত নির্মূলাভিযান বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু অভাব রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার। রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জীবন ও মিয়ানমারের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই ইচ্ছার ওপর।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই হাইড্রোজেন বোমাটির ক্ষমতা ছিল প্রায় ১০০ কিলোটন। উপগ্রহের পাঠানো ছবি পরীক্ষা করে এ বার তারা বলছেন, ওই হাইড্রোজেন বোমার ক্ষমতা ২৫০ কিলোটনও হতে পারে। তার মানে, হিরোশিমায় যে বোমাটি পড়েছিল, তার অন্তত ১৭ গুণ।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024