শীর্ষবিন্দু নিউজ: ইস্ট লন্ডন মসজিদের উদ্যেগে ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার পূর্ব লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পর্কে ষষ্ঠতম মুসলিম চ্যারিটি রান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০১২ সালে শুরু হওয়া আর কমিউনিটির নানা বয়সের শিশু-কিশোর, তরুণ যুবক ও বয়বৃদ্ধদের অংশগ্রহণে এই চ্যারিটি রান উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
নির্ধারিত স্থানে পৌছলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে মুসলিম চ্যারিটি রানের মনোগ্রামখচিত স্পেশাল টি-শার্ট দেয়া হয়। মূল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগে প্রায় ঘন্টাখানেক চলে শরীরচর্চা। এর আগে সকাল ১১টায় প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৯টা থেকেই ছুটে আসতে থাকেন কমিউনিটির নানা বয়সের শিশু-কিশোর, তরুণ যুবক ও বয়বৃদ্ধরা। সকলেরই গন্তব্য ছিলো ভিক্টোরিয়া পার্ক।
ঘড়ির কাটা যখন ১১টায় ছুঁই ছুঁই, তখন সকলেই গিয়ে দাঁড়ালেন স্টার্টিং পয়েন্টে। এগারোটা ১০ মিনিটে বেজে উঠলো হুইশেল। শুরু হলো ৫ কিলোমিটার দৌঁড়। মাত্র ১৯ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে পাঁচ কিলোমিটার রুট ঘুরে এসে প্রথম হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি করেন মোহাম্মদ হিরসি। অন্যান্য বিজয়ীরাও আধঘন্টার আগেই পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসেন। আর এভাবেই ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও বিভিন্ন চ্যারিটির জন্য মোটা অংকের ফান্ডরেইজ করলেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রথম দিকে এই ক্যাম্পেইন শুধু ইস্ট লন্ডন মসজিদের ফান্ডরেইজিংয়ের জন্য শুরু হলেও এখন এটার পরিধি অনেক বেড়েছে। শুধুমাত্র ২০ পাউন্ডের একটি এডমিন ফি প্রদান করে প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের পছন্দের চ্যারিটির জন্য ফান্ডরেইজ করতে পারছেন। ইস্ট লন্ডন মসজিদ ধর্মীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি কমিউনিটির মানুষকে একিভূত করে আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছে।
এবারের চ্যারিটি রানের স্পনসর ছিলো ইসলামিক হেলপ, ঈমান চ্যানেল, মুসলিম হ্যাণ্ডস, মুনতাদা এইড, আল-মানার ইসলামিক শপ, অল সিজন ফুডস, ইসলমিক রিলিফ, মিন্ট ক্যাইটারার্স, হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন, লন্ডন সুন্নাহ সারকামসেশন, ইস্ট এন্ড ট্রেনিং, হিউম্যান এইড, প্যানি অ্যাপিল, মুসলিম এইড, জাহরা সলিসিটরস, কুদ্দুস সলিসিটরস, বামফোর্ড ট্রাস্ট পিএলসি, দ্যা অ্যাট্রিয়াম, বোম্বে ফ্যাশন, অমেগা অ্যাকাউন্টেন্ট, সালমা আবায়া শপ, হাজি তাসলিম ফিউনারেলস, ফিস্ট এন্ড মিষ্টি ও অ্যারিয়েল আর্ক।
২০১২ সালে শুরু হওয়া এই চ্যারিটি রান প্রথম তিন বছর রান ফর ইউর মস্ক নামে পরিচালিত হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে কিছু পরিবর্তন এনে ক্যাম্পেইনের নামকরণ করা হয় মুসলিম চ্যারিটি রান। বিগত দিনে শুধু ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজ করা হয়।
আর মুসলিম চ্যারিটি রান নামকরণের পর থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য ফান্ডরেইজিংয়ের পাশাপাশি অন্যান্য চ্যারিটি সংস্থার জন্যও ফান্ডরেইজ করছেন অংশগ্রহণকারীরা। গত বছরের মতো এবারও ইসলামিক রিলিফ, মুসলিম এইড, মুসলিম হ্যান্ডস, হিউম্যান এইড, হেলপিং হিউম্যানিটি, মুনতাদা এইড, হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন, হিউম্যান অ্যাপিল, জামিয়াতুল উম্মাহ, হাগস, এইটথ ইস্ট লন্ডন স্কাউট, হিউম্যান কেয়ার ইনিশিয়েটিভ, বাংলাদেশ রিজেনারেশন ট্রাস্ট, গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট, লনলি অরফ্যানস, নুরুল ইসলাম ট্রাস্ট, গ্রেনেস ইসলামিক সেন্টার, ইসলামিক হেলপ ইত্যাদি চ্যারিটি সংগঠন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
চ্যারিটি রানে অংশগ্রহণকারীদের ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ৫ বিজয়ীকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এর মধ্যে অনুর্ধ ১২ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মোহাম্মদ ইকরাম হোসাইন। তিনি মাত্র ২৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে পাঁচ কিলোমিটার রুট ঘুরে আসেন। তাছাড়া ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন ইব্রাহিম আজাদ। তিনি ২৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিযোগিতা শেষ করেন। এরপর ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন মুসলিম আল-তাইয়্যেব। তিনি ২০ মিনিট ১১ সেকেন্ডে ৫ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করনে। ৩৫ থেকে ৫০ বয়স ক্যাটারিতে বিজয়ী হন মুহাম্মদ হিরসি। তিনি ১৯ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হন। তাছাড়া সর্বশেষ ক্যাটাগরি ৫১ ও ততোর্ধ বয়স ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন সানু মিয়া। তিনি ২৩ মিনিট ৯ সেকেন্ডে দৌড় সম্পন্ন করেন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে অনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। বিজয়ীদের জন্য পুরস্কার ছিলো একটি নিনটেনডো থ্রিডিএস, মাউন্টেইন বাইক, রেড লেটার ডে, ট্যাবলেট ও লেপটপ। ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক দেলওয়ার হোসাইন খানের উপস্থাপনায় পুরষ্কার বিতরনী পর্বে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম, ইস্ট লন্ডন মসজিদের সেক্রেটারি আইয়ুব খান ও কমিউনিটি নেতা আতিকুর রহমান জিলু।
এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নির্বাহী মেয়র জন বিগস মুসলিম চ্যারিটি রানের মাধ্যমে কমিউনিটির বিভিন্নস্তরের মানুষকে ভালোকাজে সমবেত করার জন্য ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চ্যারিটি কাজের জন্য টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল লন্ডনের অন্যান্য বারার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইস্ট লন্ডন মসজিদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আগামীতে এই রান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহবান জানান।