সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১২

যুক্তরাজ্যের আর্থিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের চিংড়ি চাষিরা

যুক্তরাজ্যের আর্থিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের চিংড়ি চাষিরা

অর্থনীতি ডেস্ক: হঠাৎ করেই চিংড়ির দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাগেরহাটের চিংড়ি চাষিরা। ফলে চিংড়ি চাষের জন্য নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। ম্লান হয়ে গেছে তাদের মুখের হাসি।

বাগেরহাটের বাজারে গলদা চিংড়ির দাম প্রতি কেজিতে চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা কমে গেছে। যুক্তরাজ্যসহ আমদানিকারক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাগেরহাটে চিংড়ির দাম পড়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয় মৎস্য বিভাগের।

বাগেরহাটের বিভিন্ন চিংড়ি বাজার ঘুরে ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন চিংড়ি বিক্রির যথোপযুক্ত মৌসুম। বছরের ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের এই সময়ে চাষিরা তাদের ঘেরের সব চিংড়ি ধরে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। ফলে এ সময়ে অর্থপ্রবাহ থাকায় চিংড়ি ব্যবসায়ীরা ফুরফুরে মেজাজে থাকেন।

কিন্তু হঠাৎ করে বাগেরহাটের বারাকপুর, সিন্ডবি বাজার ও ফলতিতা মৎস্য আড়তে গলদা চিংড়ির দাম প্রতি চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা কমে গেছে। আর এতে ম্লান হয়ে গেছে চিংড়ি চাষিদের মুখের হাসি। উপরন্তু ধার-দেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে তাদের।

চলতি মৌসুমে গলদা চিংড়ির বর্তমান বাজার দর ৫ গ্রেড ৭৫০ টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ১১০০ টাকা। ১০ গ্রেড ৬৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৯৫০ টাকা। ১৫ গ্রেড ৫৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৯৫০ টাকা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের শ্রীঘাট গ্রামের এক চিংড়ি চাষি বলেন, আমার সাড়ে পাঁচ বিঘার মাছের ঘের রয়েছে। রেণু পোনা, মাছের খাবার ও হারির টাকা মিলিয়ে এবছর খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। মাছ ধরে বিক্রির মৌসুম শুরু হলেও এখনো ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারিনি। হঠাৎ করে গলদা চিংড়ির বাজার পড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। লাভ তো দূরের কথা এবছর খরচের আসল টাকাই উঠা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বিলকুল গ্রামের আব্দুল বারেক পাইক বলেন, ১২ বিঘা জমিতে আমি গলদা চিংড়ির চাষ করেছি। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছি। সব মিলিয়ে খরচ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। চিংড়ির ধরার মৌসুম শুরু হলেও দাম পড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। মাছের বাজার এভাবে থাকলে ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব আর সংসার কীভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, চলতি মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে জেলার প্রায় এগারো হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর কিছুদিন আগে বাগদা চিংড়িতে ভাইরাসের সংক্রমণে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপর বাজারে গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ আমদানিকারক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার কারনে স্থানীয় বাজারে চিংড়ির দাম পড়ে গেছে বলে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকরা বলছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। চিংড়ির দাম খুব শিগগির আবার আগের জায়গায় ফিরবে বলে আশা করছি।

বাগেরহাট বারাকপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আড়ৎদারদের সাথে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের রপ্তানিকারকরা তাদের নিয়োগ করা নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে চিংড়ি কেনাবেচা করে থাকেন। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের খবর আমরা সব পাইনা। এজেন্টরা আমাদের যেভাবে বুঝান সেভাবেই এই চিংড়ির বাজারটা চলছে।

চিংড়ির দাম বাড়া-কমায় সরকারের মৎস্য বিভাগের তদারকি না থাকায় তারা এই সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার। তাই এই চিংড়ি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তা নাহলে বৃহৎ এই শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তার।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024