শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: কাতালোনিয়ায় স্পেনের পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে গণভোট শুরু হয়েছে। স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যালট পেপার জব্দ করতে শুরু করেছে সে দেশের পুলিশ।
বার্সেলোনায় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা সৃষ্টি করেছে পুলিশ। এদিকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে থাকা স্কুলগুলোর দখল নিয়ে রেখেছে। শুক্রবার ক্লাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাতালানরা স্কুলগুলোর দখল নিয়ে সেখানেই রাত্রিযাপন করতে শুরু করে।
স্পেনের সাংবিধানিক আদালতের স্থগিতকৃত সেই গণভোট রুখে দিতে স্পেনের জাতীয় পুলিশ ভোটকেন্দ্র হওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রায় এক হাজার ৩০০টি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এরইমধ্যে ভোটদান ও গণনার ইলেকট্রানিক মেশিন বিকল করে দেবার জন্য স্পেনের সরকার ওই অঞ্চলের স্খানীয় সরকারের টেলিযোগাযোগ দফতরের দখল নিয়েছে। চলছে পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতার।
তারপরও স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার কাতালানরা। সেখানকার পুলিশ কেন্দ্রিয় স্পেন সরকারের আনুগত্য মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এরইমধ্যে। জনগণ নেমে এসেছে রাস্তায়। বন্ধ হওয়া স্কুল গুলোতে থেকে গেছেন অসংখ্য মানুষ, যারা কাতালোনিয়াকে স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন দেখতে চান।
গণভোট আয়োজনে এ মাসের শুরুর দিকে কাতালান পার্লামেন্ট নতুন একটি আইন পাশ করে। তবে দেশটির সাংবিধানিক আদালত ওই আইনে স্থগিতাদেশ দেয়। স্পেনের সরকার বলছে এ ভোট অবৈধ। অন্যদিকে কাতালোনিয়ার সরকার এ অঞ্চলের জনগণকে ভোট সফল করার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, স্পেনের বিত্তশালী অঞ্চল কাতালোনিয়ায় প্রায় ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস। এর রাজধানী বার্সেলোনা। অঞ্চলটির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। স্পেনের সংবিধান অনুযায়ী, সম্পদশালী কাতালোনিয়ার স্বায়ত্বশাসন আছে।
তবে সেখানকার জনগণ স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা চায়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কাতালোনিয়া প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সেখানকার স্বাধীনতাকামীরা। নির্বাচনের ওই ফলের মধ্য দিয়ে স্পেন থেকে পৃথক হয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পথে এক ধাপ এগিয়ে যায় কাতালানরা।
গত জুনে কাতালোনিয়া কর্তৃপক্ষ ১ অক্টোবর গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেয়। স্পেন সরকার এ ধরনের গণভোটকে বেআইনি বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও গণভোটের আয়োজন থেকে সরে আসেনি কাতালানরা। গণভোটকে সামনে রেখে শনিবার সেখানকার লাখো মানুষ মিছিলে অংশ নেন। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে মিছিলটিকে প্রথম পদক্ষেপ আখ্যা দেন কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুগডেমন্ট।
স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার গণভোট ঠেকানোর জন্য নানা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার কাতালোনিয়ায় হাজার হাজার ন্যাশনাল পুলিশের কর্মকর্তাকে মোতায়েন করা হয়েছে। যে স্কুলগুলোতে ভোটকেন্দ্র হবার কথা সেরকম ২০,৩১৫টি স্কুলের মধে এক হাজার ৩৯৯টি পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, কাতালোনিয়ার সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ব্যালট পেপার। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতেও চালানো হয়েছে তল্লাশি। এ ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা অকার্যকর করে দেবার জন্য কাতালোনিয়ার সরকারের টেলিযোগাযোগ ও আইটি দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অনলাইনে গণভোটের প্রচার চলানো হচ্ছে এমন লিংক বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এতো কিছুতেও অবশ্য স্বাধীনতার দাবি রোখা যায়নি। গণভোটের পক্ষে রাস্তায় নেমে এসেছেন কাতালানরা। কেন্দ্রীয় সরকারের বাধার প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করছেন। কাতালান আঞ্চলিক পুলিশ কর্মকর্তাদের স্পেনের জাতীয় পুলিশ বাহিনীকে সহায়তার আদেশ দেওয়া হলেও তারা মাঠে নামেনি বলে জানায় বিবিসি।ভোট কেন্দ্রগুলো যাতে বন্ধ করে দেয়া না যায় সে জন্য বহু কাতালান অভিভাবক গ্রেপ্তার হবার ঝুঁকি নিয়েও গত রাতে স্কুলের ভেতরে ঘুমিয়েছেন।
কাতালোনিয়ার সরকার বলছে, তারা ছয় হাজার ব্যালট বাক্স তৈরি করেছে এবং সেগুলো গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই কাতালোনিয়ার সরকার স্কুলগুলোতে ভোটকেন্দ্র বসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের থামাতে বল প্রয়োগ শুরু করে মাদ্রিদ; শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড় ও তল্লাশি অভিযান। রোববারের গণভোট আটকাতে কাতালুনিয়ায় হাজার হাজার পুলিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অন্যদিকে রাজধানী মাদ্রিদে হাজার হাজার লোক এই গণভোটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। গণভোট বন্ধে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার ভূমিকা প্রসঙ্গে কাতালান কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাজটা হবে বেশ কঠিন। গণভোটের পক্ষের কর্মীরা যে স্কুলগুলোতে ভোট কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে সেগুলোর অনেকগুলো পাহারা দিচ্ছে।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কাতালান পার্লামেন্টে গণভোটের প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটাভুটির পর পরই কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুগডেমন্ট বিলটিতে স্বাক্ষর করে তা স্থানীয় আইনে পরিণত করেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে সে সময় বলা হয়, ১ অক্টোবর কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে বুধবার আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। বার্সেলোনার ১৩৫ আসনবিশিষ্ট আইনসভায় প্রস্তাবের পক্ষে ৭২টি ভোট পড়ে। ভোটদান থেকে বিরত থাকেন ১১ জন। ভোটাভুটির ফলাফল ঘোষণার পর পরই এমপিরা কাতালোনিয়ার জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন।