শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে বৃটিশ সরকার। একই সঙ্গে তাদের জন্য বাড়তি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্বিগুন ডোনেশন দেবে।
বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে রয়ে যাওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বৃটেন সম্ভাব্য সব কিছু করবে। সেনাবাহিনীকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তারা তা আমলে নিচ্ছে না। এটা অসহনীয়। বৃটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বুধবার রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৃটিশ সরকার।
এতে বলা হয়, শুধু গত এক মাসে মিয়ানমারে নৃশংসতার করণে ভয়াবহ সফরের মাধ্যমে কমপক্ষে ৫ লাখ শিশু, নারী ও পুরুষ মিয়ানমারে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। মিয়ানমারের এ সঙ্কট ও বাংলাদেশের এর অপ্রত্যাশিত মাত্রায় প্রভাবের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে বৃটেন।
এরই মধ্যে নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষাকারী খাবার, পানি, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে তিন কোটি পাউন্ড দিয়েছে বৃটেন। বুধবার বৃটেনের জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটি মিয়ানমার ছেড়ে পালানো এসব মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আবেদন জানায়।
এর মাধ্যমে এ সঙ্কটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বৃটেন। বৃটেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, মিয়ানমারে ভয়াবহ সহিংসতার কারণে যেভাবে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছেড়েছেন তাতে আমি হতভম্ব। যারা এভাবে পালিয়ে এসেছেন তারা সঙ্গে করে কিছুই নিয়ে আসতে পারেন নি।
নিরাপত্তার জন্য তারা ভয়াবহ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এর ফলে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। অনেকে হারিয়েছেন প্রিয়জনকে। যারা এখনও রাখাইনে অবস্থান করছেন তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে না দেয়ার অর্থ হলো তাদেরকে জীবন-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া।
বিরত থাকা জন্য আহ্বান জানানোর পরও অভিযুস্ত সেনারা থামছেনা এটা অসহনীয়। শরণার্থীদের নিরাপদে ফেরা নিশ্চিত করার দাবির প্রতিও তারা সাড়া দিচ্ছে না। এই সঙ্কটে এই সময়ে এই ভয়াবহ ট্রাজেডির শিকার মানুষগুলোকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে এবং সম্ভাব্য সব সহযোগিতা করতে সবটুকুই করবে বৃটেন।
জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির আবেদনে জনগণ পাউন্ডের পর পাউন্ড জমা দেবেন এবং সেই র্থৈ আমরা বৃটিশ মানুষের সহায়তা দ্বিগুন করবো। আমরা সহায়তা করবো বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে রয়ে যাওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষকে। বিবৃতিতে বলা হয়, বৃটিশ জনগণের ট্যাক্সের অর্থ থেকে এই মধ্যে এসব মানুষকে সহায়তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারে জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। এই সপ্তাহজুড়ে শরণার্থীদের মাঝে ১০ হাজার তাঁবু, ১০৫০০ ম্যাট ও ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করবে বৃটিশ সরকারের অংশীদার ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)। এরই মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ২৬৩৫৫ জন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৬৫০০০ মানুষকে খাদ্য ও ৫০ হাজার মানুষকে এরই মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। যৌন সহিংসতা, পাচার ও অন্যান্য যেসব বিপদের মুখে রয়েছে শিশুরা এমন ৭৫০০ শিশুকে সেবা দেয়া হচ্ছে। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বৃটিশ জনগণের দান করা প্রতি ৫ পাউন্ড দিয়ে একটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য এক সপ্তাহের জন্য পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করা যাবে।
১০০ পাউন্ডে দু’টি পরিবারের জন্য এক মাসের খাদ্য নিশ্চিত করা যাবে। প্রতি ৩০ পাউন্ডে একটি পরিবারকে জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যাবে। এতে আরো বলা হয়, এসব সহায়তায় বৃটেনের জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ১৩টি দাতব্য সংস্থাকে একত্রিত করেছে।
তারা হলো একশন এইড, এইজ ইন্টারন্যাশনাল, বৃটিশ রেড ক্রস, ক্যাফোড, কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ক্রিশ্চিয়ান এইড, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড, অক্সফাম, প্লান ইন্টারন্যাশনাল ইউকে, সেভ দ্য চিলড্রেন, টিয়ারফান্ড অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ভিশন। এসব সংস্থা দুর্ভোগে পড়া এসব রোহিঙ্গাকে সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।