সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করার বিষয়ে জোর দেন আটিকেল ১৯, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক তাহমিনা রহমান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোর-এ আর্টিকেল ১৯ ও রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (আরআইবি) আয়োজিত জাতিসংঘের বাংলাদেশের উপর ‘ইউপিআর’ বিষয়ক তৃতীয় মেয়াদের খসড়া প্রতিবেদন সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আটিকেল ১৯ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক তাহমিনা রহমান ও রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা খসড়া প্রতিবেদনে বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেন। পরে এগুলোর উপর আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক অজয় রায়, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মীরা।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় জাতিসংঘের পরবর্তী ইউপিআর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে। তিনি আরও বলেন, ৫৭ ধারা গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানির জন্য করা হয়নি। কিন্তু সরকার বা তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। তাই আইন মন্ত্রণালয়, তথ্যমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ৪০ জেলা থেকে আগত অর্ধশতাধিক সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মী এবং নিহত সাংবাদিক ও যোগাযোগমাধ্যমকর্মীদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
সাংবাদিকগণ মন্ত্রী এবং ইউপিআর রিপোর্টের উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের উপর বিভিন্ন রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ এবং ৫৭ ধারা বাতিল করতে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হত্যার শিকার সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ এসব হত্যাকান্ডের বিচারের দীর্ঘসূত্রীতা দূর করে অচিরেই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রতি জোর দেন।
তাহমিনা রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ইউপিআর বিষয়ক এ খসড়া প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মত প্রকাশ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ম্যাকানিজম, গণমাধ্যম-মানবাধিকার-সুশীলসমাজের নিরাপত্তা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে মত প্রকাশ বিষয়ে একটি সাব কমিটির গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, লিঙ্গ বৈষম্য ও যৌন হয়রানি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে তিনি বিস্তারিত মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মীদের কন্ঠরোধ করার যে পরিবেশ এর সাথে গণতন্ত্রের যোগসূত্র রয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অচিরেই এই পরিবেশ দূর করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ৫৭ ধারার কারণে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এজন্য দ্রুত এটি প্রত্যাহার বা পরিমার্জনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি।
সোহরাব হাসান বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের স্বাধীনতা বোঝায় না। মূলত সকল গোষ্ঠি বা মানুষের স্বাধীনতাকে বোঝায়। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উপর সকল ধরনের হামলা-মামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান।
নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের সিডও সনদ অনুমোদন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নাসিমুন আরা হক মিনু
সভায় উপস্থিত দেশের বিভিন্ন জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সংক্ষিপ্ত মতামত তুলে ধরেন।
– প্রেরিত সংবাদ