শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার জন্য নেত্রী অং সান সুচি ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব যখন ঝাঁঝালো সমালোচনা করছে। অবরোধ দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে, ঠিক তখনই মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে রাশিয়া।
এ বিষয়ে গত মাসেই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। বিলম্বে ওই চুক্তির ভিতরকার খবর প্রকাশ করেছে অনলাইন মিয়ানমার টাইমস। এর আগেই মিয়ানমারের সঙ্গে রাশিয়ার মাখামাখি সম্পর্ক নিয়ে হুঁশিয়ার করেছেন জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব রোস্টোকের সহকারী প্রফেসর ড. লুদমিলা রুটজ-অরাস।
তিনি বলেছেন, মিয়ানমারকে এশিয়ার ‘খুঁটি’ হিসেবে দেখছে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে তারা আসিয়ানে পা রাখার জায়গা করে নিচ্ছে। এ বিষয়গুলোই গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমার টাইমস লিখেছে, মস্কোতে গত মাসেই দু’দেশের মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয় ‘রাশিয়া-মিয়ানমার ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন’ (আরএমআইসি) মিটিং।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে রাশিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধিত্বকারী একটি অফিস স্থাপনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মাকসিম ওরেশকিন ও মিয়ানমারের পরিকল্পনা ও অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রী ইউ কাইওয়া উইন।
এ বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে ২০১৬ সালে বাণিজ্য দ্বিগুন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন রাশিয়ার মন্ত্রী ওরেশকিন। এ জন্যই ইয়াঙ্গুনে একটি অফিস খোলার কথা জানান তিনি। গত বছর এ দুটি দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে টার্নওভার দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের তুলনায় এক্ষেত্রে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ। এমন তথ্য দিয়েছে রাশিয়ার দূতাবাস। অন্যদিকে এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে এই বাণিজ্য পৌঁছে গেছে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ২০১৬ সালের একই সময়ের তুলনায় এক্ষেত্রে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ।
মিয়ানমারে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাভ এ লিস্টোপাদোভ বলেছেন, তিন বছরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বার্ষিক বাণিজ্যিক টার্নওভার ৫০ কোটি ডলার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক সহযোগিতার এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
তিনি আরো বলেছেন, ইয়াঙ্গুনে যে বাণিজ্যিক অফিস স্থাপন করবে রাশিয়া তার মাধ্যমে চারটি চ্যানেল ব্যবহার করে টার্গেট পূরণ করা হবে। এর প্রথমটি হবে মিয়ানমারে বাণিজ্যিক সুযোগ চিহ্নিত করা এবং মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যে, কি ধরনের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক চাহিদা আছে।
রাশিয়ার পণ্য ও প্রযুুক্তি রপ্তানি করে এ উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে দেয়া হবে। যৌথ প্রকল্পে সমর্থন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিরোধ থাকলে তা সমাধানের কৌশল নির্ধারণ করা হবে।
এ ছাড়া ইয়াঙ্গুনে রাশিয়ার ওই অফিস মিয়ানমারের রপ্তানিকারকদেরকে রাশিয়ার বাজারে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেবে। পাশাপাশি ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক ইউনিয়নভুক্ত সদস্য দেশগুলোর বাজারেও মিয়ানমারের প্রবেশের পথ করে দেয়া হবে। আরএমআইসি মিটিংয়ে কৃষি পণ্যের বাণিজ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ সময় দু’দেশই বিস্তৃত পরিসরে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সম্পর্কের কথা তুলে ধরে। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আইনগত ফ্রেমওয়ার্ককে আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়। পারমাণবিক কর্মকান্ড সমৃদ্ধ করার সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ বিষয়ক প্রকল্পের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, এ বছরের শেষের দিকে কৃষিখাত ভিত্তিক সফরে ইয়াঙ্গান আসবে রাশিয়ার একদল প্রতিনিধি।
এ ছাড়া রাশিয়ায় পড়তে যাওয়া মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের কোটা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে আরএমআইসি। উপরন্তু রাশিয়া থেকে মেশিনারি, বিভিন্ন সরঞ্জাম, ই-গভর্নমেন্ট ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রযুক্তি আমদানির ফলে মিয়ানমারে রাশিয়ার বাণিজ্য ফুলেফেঁপে উঠছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের মতে, মিয়ানমারের বিদ্যুত উৎপাদন বিষয়ক অবকাঠানোর উন্নয়ন হলো এমন একটি এরিয়া, যেখানে রাশিয়ার বাণিজ্য বেশি সক্রিয় হয়েছে। তবে ড. লুদমিলা বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার মাধ্যমে মিয়ানমার নিজেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।