মিনহাজ উদ্দিন: সিলেটের গোয়াইনঘাটের ৭নং নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের সালুটিকরের অজপাড়াগাঁ আঙ্গারজুর গ্রাম। গ্রামটির চারদিকেই বিস্তৃত ফসলের মাঠ। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটলে ধানক্ষেত থেকে আসা ম-ম গন্ধ শোভা পায়। সেই নিভৃত পল্লীর আঙ্গারজুরের রক্ষণশীল পরিবারের গৃহবধূ আকলিমা বেগম।
তিনি গড়ে তুলেছেন একটি কোয়েল পাখির খামার। খামার গড়ে তোলে দেখিয়েছেন ইচ্ছে থাকলে ঘরে বসেও বাড়তি আয় রোজগারের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণ ও বাড়তি আয় করা সম্ভব। গ্রাম গৃহবধূ আকলিমা এখন গোয়াইনঘাটের নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন আইডল। তার দরিদ্রতা জয়ের গল্প এখন গোয়াইনঘাটের আনাচে কানাচে ঘুরপাক খাচ্ছে। জেগে ওঠছেন নারীরা। তার মতো স্বাবলম্বী হতে উদ্যোগী হচ্ছেন অনেকেই। সরজমিন গেলে ফুটে ওঠে তার সফলতার চিত্র।
জানা যায়, আকলিমা বেগেমের স্বামী হাফিজ হেলাল উদ্দিন। পেশায় তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার ইসলামেরগাঁও (পূর্ব) জামে মসজিদের ইমাম। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি সেখানে ইমামতি করে আসছেন। স্বামী হাফিজ হেলালের বেতনের টাকায় কোনোক্রমেই চলছিল না ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে গড়ে ওঠা আকলিমা হেলাল দম্পতির ৫ সদস্যের সংসার। হঠাৎ স্বামীর আর্থিক টানাপোড়েন ও কষ্টের দিনলিপিতে শরিক হওয়ার উদ্যোগ নেন স্ত্রী আকলিমা বেগম। স্বামী আর নিজের সঞ্চয়কৃত টাকায় ২ বছর পূর্বে গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি কোয়েল পাখির খামার। নাম দেয়া হয় ফাতেমা কোয়েল খামার। বাড়ির দুটি রুমে ডিম উৎপাদন, বাচ্চা তোলা ও লালন পালনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ১০০টি ডিম দিয়ে তাদের স্বপ্নের সেই খামারের যাত্রা শুরু হয়। তারা হারিকেন পদ্ধতিতে তারা তাদের খামারের বাচ্চা ওঠানোর কাজ শুরু হয়। সেই ১০০টি ডিম থেকে ৬৫টি বাচ্চা ফুটেছিল।
সেই থেকে আর তাদের পেছনে তাকাতে হয়নি। আকলিমা বেগমের হাতেগড়া ফাতেমা কোয়েল খামারে বর্তমানে ডিম দেয় এমন পাখি আছে ১৫০টি। আর তা থেকে প্রতিদিন ন্যূনতম ৯০টি এবং সপ্তাহে ডিম আসে ৭০০-৮০০টি। ঘরের মিস্রিবে হারিকেন পদ্ধতিতে এসব উৎপাদিত ডিম থেকে মাসে ৪ কিস্তিতে ১৭ দিন করে তাপ দিলে ৪০০-৫০০টি বাচ্ছা ফুটে। ডিম থেকে ফুটানো বাচ্ছাগুলো ৮-১০ দিন তাপ দেয়ার পর তা বিক্রির উপযুক্ত হয়।
প্রতি মাসে অন্তত ২০০০টি কোয়েল পাখি বিক্রি করা সম্ভব হয়। এই উৎপাদিত কোয়েল পাখি বাড়িতেই প্রতি পিছ কোয়েল পাখি ২৫ টাকা (পাইকারি দরে) বিক্রি করেন আকলিমা বেগম। মাসে তিনি ১০০০০-১২০০০ টাকা বাড়তি আয় করতে পারেন।
এই প্রতিনিধির সঙ্গে একান্ত আলপচারিতায় আকলিমা বেগম জানান, আমি একজন গৃহিণী ঘরের যাবতীয় কাজ করার পাশাপাশি এ খামারে কিছু সময় ব্যয় করি। স্বামীর অসচ্ছলতা তাকে সহযোগিতাদানেই একটি কোয়েল খামার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিই। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় আমার প্রতিষ্ঠিত ফাতেমা কোয়েল খামারের অস্তিত্ব নিয়ে প্রথমে বিপাকে পড়ি, পরে আস্তে আস্তে বিষয়টি আয়ত্তে চলে আসলে সব ঠিক হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি এ খামার নিয়ে আশাবাদী এবং সরকারিভাবে আর্থিক ঋণ বা সহযোগিতা পেলে তিনি আরও ভালো একজন খামারি এমনকি স্থানীয় বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
তার স্বামী ইমাম হাফিজ হেলাল উদ্দিন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠিত ফাতেমা কোয়েল খামারটি এখন ভালোই চলছে, খামারটি আমার পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা দূরীকরণে ভূমিকা পালন করছে। খামারটি আমার পরিবারের প্রতি মাসে বাড়তি আয় রোজগারের পথও সুগম করে দিয়েছে। সরকারের কোনো দপ্তর থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে খামারটি আরও সম্প্রসারিত করতে পারবো। গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান,এই ধরনের উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সমাজ থেকে বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা পালন করে থাকেন। ফাতেমা কোয়েল খামারের সফলতা কামনা করে তিনি জানান, এই নারী উদ্যোক্তার খামারের ঋণসহ পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা বিবেচনা করা হবে।