শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৯

মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখায় দেশের অভ্যন্তরেই চাপের মুখে ইসরায়েল

মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখায় দেশের অভ্যন্তরেই চাপের মুখে ইসরায়েল

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারে সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখে দেশের অভ্যন্তরেই তোপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠা মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন খোদ সে দেশেরই মানবাধিকারকর্মীরা।

অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে এক পিটিশন দায়ের করেছেন মানবাধিকার-আইনজীবীরা। এ্ররইমধ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। একজন বিশ্লেষক ইসরায়েলের এই ভূমিকাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানির ইহুদি নিধনযজ্ঞে অস্ত্র সরবরাহের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে। এই হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা। এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

এরপর সারাবিশ্বের তোপের মুখে পড়ে মিয়ানমার। তবে দেশটির সঙ্গে সামরিক-সম্পর্ক অব্যহত রাখে ইসরায়েল। বিস্তারিত জানা না গেলেও জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে টহলনৌকা, বন্দুক ও নজরদারির সরঞ্জাম বিক্রি করেছে তারা। এছাড়া মিয়ানমারের বিশেষ বাহিনীকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে ইসরায়েল। এর প্রতিবাদে ৩০ অক্টোবর তারিখে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সে দেশের মানবাধিকা্র কর্মীরা।

গ্রীষ্মে ফাঁস হওয়া ইসরায়েল সরকারের এক অভ্যন্তরীণ নথির সূত্রে আল জাজিরা জানায়, অস্ত্র রফতানি লাইসেন্সের জন্য শতকরা ৯৯.৮ ভাগ সময়ই ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। ম্যাক দাবি করেন, মিয়ানমার ও দক্ষিণ সুদানে অস্ত্র সরবরাহ ছাড়াও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে রুয়ান্ডা, বলকান, চিলি, আর্জেন্টিনা, শ্রীলঙ্কা, হাইতি, এল স্যালভ্যাদর ও নিকারাগুয়ার বিরুদ্ধে; জাতিগত নিধনযজ্ঞ সম্পন্নে তাদের সবাইকে অস্ত্র দিয়েছিলো ইসরায়েল। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যেও ভূমিকা ছিলো দেশটির।

মানবাধিকার আইনজীবী এইতায় ম্যাক মনে করেন, মিয়ানমারের জাতিগত নিধন যখন বিশ্বজুড়ে দৃশ্যমান, তখন ইসরায়েলের ভূমিকা উন্মোচনের কাজটি সহজ হবে। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন ‘অনেক পশ্চিমা দেশই অস্ত্র বিক্রি করে। কিন্তু ইসরায়েলের ব্যাপারটি আলাদা। যেখানেই আপনি যুদ্ধাপরাধ কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ দেখবেন, সেখানেই ইসরায়েলকে খুঁজে পাবেন।’

মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের অস্ত্র চুক্তি অপ্রকাশিতই থেকে যায়। দেশের অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সরকারি কর্মকর্তারাও। ম্যাক ইসরায়েলের আদালতে পিটিশন দায়ের করেছেন যেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে তেল আবিবের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, এই মামলাগুলোর মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কন্ট্র্যাক্টরদের যুদ্ধাপরাধ যাচাই করা হবে। অবশ্য গত বছরে একই একই্ আদালত এরকমের একটি পিটিশনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলো।

ম্যাক মনে করেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কটা আসলে ইসরায়েলের পুরোনো ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এই অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমেই ইসরায়েলের অর্থনীতি টিকে আছে। যারা এই অস্ত্র বিক্রি করে এবং যেই কর্মকর্তারা এর অনুমোদন দেয় তাদেরকে অবশ্যই্ আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ইসরায়েলের ওপেন ইউনিভার্সিটির হত্যাযজ্ঞ বিষয়ক গবেষক ইয়াইর অরোন বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি হলোকাস্টের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর কাছে অস্ত্র দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘এই অস্ত্র বিক্রিতে আমিসহ সব ইসরায়েলী অপরাধী হয়ে যায়। কারণ এগুলোর আমাদের নাম করেই পাঠানো হচ্ছে। আমরাই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন দিচ্ছি।’

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লানও সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্ট দিয়েছিলেন, যেখানে দেখা যায় তিনি ইসরায়েলে শীর্ষ অস্ত্র উৎপানদকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সফর করেছেন। একবছর পরে ইসরায়েলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মাইকেল বেন বারুশও মিয়ানমারে সফর করেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো টহলনৌকা নিয়ে একটি চুক্তি করা।

এর কিছুদন পর ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান টার আইডিয়াল কনসেপ্ট এর ওয়েবসাইটে এক ছবি প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যায় মিয়ানমার বিশেষ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদের স্টাফরা।

জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ করা যেকোনও দেশের এখন বিক্রি বন্ধ রাখা উচিত।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024