শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: রাজনীতিতে দোর্দন্ড প্রতাপশালী নওয়াজ শরীফের পতন আর ইমরান খানের উত্থানের মধ্য দিয়ে একটি বছর কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে।
এ বছরে দেশটিতে ঘটে গেছে আরো অনেক ঘটনা। এ বছরে ইমরান খানের ‘বাজি’কে পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্থান বলে আখ্যায়িত করছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকারী নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে (পিপিপি) ধরাশায়ী করেছেন ইমরান। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় খুলে দিয়েছেন কর্তারপুর করিডোর। এতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হবে বলে ধরে নেয়া হয়।
এর আগে ২০১৬ সালে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় ভারতে। অন্যদিকে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মিরে ভারতের সার্জিকেল স্ট্রাইকের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে প্রচন্ড টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় কোনো সংলাপ না হওয়ায় ২০১৭ সালে এই উত্তেজনা আরো বিকট আকার ধারণ করে।
নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভয়াবহ বিচ্ছিন্ন সব হামলা ও কূটনৈতিক তিক্ত সম্পর্ক সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলে। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য দুই দেশই খুলে দেয় কর্তারপুর সীমান্ত।
এতে ২০১৯ সালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা হয়। ওই করিডোরটি আগামী সপ্তাহেজ গুরু নানক দেবের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকীর আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, কর্তারপুর ইসুটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভারতের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্তটি এসেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পক্ষ থেকে। তিনি সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাকে কাশ্মিরসহ সব বিরোধপূর্ণ ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
কিন্তু দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ভারত বাতিলের পর ওই উদ্যোগ শেষ হয়ে যায়। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক তালাত মাসুদ বলেন, ভাল আস্থা অর্জনের একটি উত্তম মাধ্যম হলো কর্তারপুর করিডোর।
দুই দশকেরও বেশি সময় পিএমএলএন এবং পিপিপির দুর্গ ভাঙার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। অবশেষে তিনি সফল হন।
ওদিকে বছরের মাঝামাঝি জুলাই মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে ১০ বছরের জেল দেয় দেশটির দুর্নীতি বিরোধী আদালত। তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ ও জামাই অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সফদারকে যথাক্রমে ৭ ও এক বছরের জেল দেয় আদালত।
এ বছরেই জীবনে আরো একটি বড় আঘাত আসে নওয়াজ শরীফের জীবনে। দীর্ঘ রোগভোগের পর লন্ডনে মারা যান নওয়াজ শরীফের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ। নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরীর দলের হাল ধরেন। তাকেও দুর্নীতির মামলায় জেলে নেয়া হয়।
এ ছাড়া এ বছরে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা নিহত হয়েছে কয়েক শত মানুষ। ৮০ বছর বয়সী ধর্মীয় নেতা মাওলানা সামিউল হক, যিনি তালেবানের জনক বলে পরিচিত তাকে এ বছরেই হত্যা করা হয়। খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে ধর্ম অবমাননার মামলায় ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছিল। তাকে এ বছর সুপ্রিম কোর্ট বেকসুর খালাস দেয়। এ নিয়ে ইসলামপন্থিদের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র ক্ষোভ।
এ বছরটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক হিম হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পাকিসআতনকে দেয়া ৩০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই উত্তেজনা দেখা দেয়। ওদিকে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক খাতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে দেশটির।